By Ramiz Ali Ahmed
২০০৯ ও ২০১০ সাল।জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘ড্যান্স বাংলা ড্যান্স‘-তে তিনি তখন পার্টিসিপেন্ট।সেখান থেকেই সুযোগ ঘটে যায় বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাড শুটে।আর সেখান থেকেই তিনি নজরে পড়েন তখন সদ্য লঞ্চ করা টিভি চ্যানেল সানন্দা চ্যানেলের ইপির।সুযোগ ঘটে যায় ‘সবিনয় নিবেদন‘ মেগায়।এরপর ‘কেয়ার করি না‘,’রাগে অনুরাগে‘ তে।এখন তিনি স্টার জলসার অতি জনপ্রিয় মেগা ‘কে আপন কে পর‘ মেগায় অভিনয় রত।অনেকেই নামটা এতক্ষনে বুঝে গেছেন।…হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন।তিনি সকলের প্রিয় কোয়েল।কোয়েল-এর আসল নাম সিমরণ উপাধ্যায়।
সিমরণের ‘কে আপন কে পর‘ মেগায় প্রবেশ ঘটেছিল মেগার প্রায় মিড ট্রাকে।অনেকেই ভেবেছিল হয়তো চরিত্রটা খুব বেশি জনপ্রিয় হবে না,কিন্তু দর্শকের ভালোবাসায় সিমরণ কোয়েল চরিত্রে রয়ে গেলেন আড়াই বছর।এখনও দর্শক সমানভাবে ভালোবেসে চলেছে।
কথা প্রসঙ্গে সিমরণ জানালেন,”ব্যক্তিগতভাবে আমি নেগেটিভ চরিত্র করতে ভালোবাসি।নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার অনেক বেশি জায়গা থাকে।অনেকরকম শেডস থাকে নেগেটিভ চরিত্রে।এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা শেয়ার করি-যখন কোয়েল চরিত্রটার লুক টেস্ট হয়েছিল তখন ইতু চরিত্রটারও লুক টেস্ট হয়।সব অভিনেত্রী ইতু চরিত্রটার জন্যই এসেছিল,কেবলমাত্র আমি কোয়েল চরিত্রটা বেছেছিলাম।এই চরিত্রটা প্রথমে তো বেশ নেগেটিভ ছিল।এমন একটা মেয়ে যে ড্রাগস নেয়,বিয়ার খায়,মা-কে সহ্য করতে পারে না।চরিত্রটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল।”
অভিনয়ের পাশাপাশি অভিনেত্রী পড়াশুনাতেও বেশ মনোযোগী।মহাঋষি বিদ্যামন্দির থেকে মাধ্যমিক,দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক,দ্য ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি তে ইংরেজি অনার্স পাঠরত।লকডাউনের জন্য তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত আছে।নইলে এতদিনে তিনি স্নাতক হয়েই যেতেন।
মা,বাবা,দাদা,দিদা নিয়ে পরিবার সিমরণের।সিমরণের অভিনয়ের ব্যাপারে সবাই খুবই সাপোর্টিভ।সিমরণ কথা প্রসঙ্গে জানালেন,”ড্যান্স বাংলা ড্যান্স-এর পর যখন আমার কাছে অভিনয়ের অফার আসে।আমি তো প্রথমে করবো না ভেবেছিলাম।কারণ আমি তো নেপালি।খুব ভালো বাংলা জানতাম না।এখনও খুব শুদ্ধ বাংলা বলতে পারি না।কিন্তু মায়ের উৎসাহে অভিনয়ে প্রবেশ ঘটে।প্রথমে খুব যে সিরিয়াসলি ভাবে অভিনয়টা নিয়েছিলাম তা নয়।কিন্তু পরে অভিনয়টাকে ভালোবেসে ফেলি।”
বাংলা মেগার পাশাপাশি তিনি হিন্দি মেগাতেও অভিনয় করতে চান।যেহেতু তিনি হিন্দিতে বেশি সাবলীল।
টেলিভিশনের পাশাপাশি তিনি ‘রাজা রানী রাজি‘,’ক্লাসরুম‘ ছবিতেও অভিনয় করেছেন।ভালো চরিত্র পেলে সিনেমাতেও অভিনয় করতে চান।তবে মেগাটাই অভিনেত্রীর প্রথম পছন্দ।অভিনেত্রী মনে করেন সিনেমার থেকে টেলিভিশনের রিচ অনেক বেশি।
জানা গেছে অভিনেত্রী প্রচন্ড ফুডি।খেতে খুব ভালোবাসেন।ঘুরতেও খুব ভালোবাসেন।প্রত্যেকবছর পুজোর আগে ঘুরতে যান,যদিও এবছর কি হবে ঠিক নেই।অভিনেত্রীর ফেভারিট ডেস্টিনেশন লন্ডন ও সুইজারল্যান্ড।
ইন্ডাস্ট্রিতে সিমরণের বেশ কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু রয়েছে।জিতু কামাল,পল্লবী(জবা),বিশ্বজিৎ(পরম),পায়েল,ইন্দ্রনীল সিমরণের বেশ শুভাকাঙ্খী।কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন,”রাগে অনুরাগে-তে জিতু দা আমার বাবার চরিত্র করতেন।জিতু দা আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করতেন যেন সত্যিকারের বাবা(হাসি)।আমার ফোন আসলে বলতেন দেখি কার ফোন এলো।এরকম বহু মজার ঘটনা আছে।”
শৈশবের কোনও একটি স্মৃতিকর ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করলে অভিনেত্রী হাসতে হাসতে জানালেন,”আমি নাকি ছোটবেলায় কয়েকবার হারিয়ে গেছিলাম।একবার হয়েছে কি-আমরা তখন ব্যাঙ্গালোরে থাকতাম।ওখানেই আমার জন্ম ও ছোটবেলা কেটেছে।আমার মায়ের বাড়ি কলকাতায়।পরে আমরা কলকাতা শিফট করে যাই।যখন ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতায় একবার আসছিলাম,মা রিসেপশনে কিছু একটা জানতে গিয়েছিল আমাকে দাদুর কাছে রেখে।আমি দাদুর কাছে মায়ের কাছে যাচ্ছি বলে চলে গিয়েছিলাম।দাদু ভেবেছেন সত্যি হয়তো মায়ের কাছে যাচ্ছি।কিন্তু মায়ের কাছে যাইনি।তখন তো বেশ ছোট যদিও ঘটনাটা পরে সবার কাছ থেকে বহুবার শুনেছি।যাইহোক সবাই মিলে স্টেশনে খোঁজাখুঁজি চলল।কিন্তু পাওয়া যায়নি।একটা সময় সবাই ভাবলো আর হয়তো পাওয়া যাবে না।তখন সাবাইয়ের মন খারাপ স্টেশন থেকে বেরিয়ে মা,একজন ভিখারিকে জিজ্ঞাসা করেন একটা মাথা ন্যাড়া-তখন আমি মাথা ন্যাড়া ছিলাম,বাচ্চা দেখেছেন কিনা।ভিখারি হাত দিয়ে একটু দূরে আমাকে দেখান।আমি নাকি আপন মনে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম,কাঁদিনি,ভয় পায়নি।”