Close

‘অরক্ষণীয়া’র পোস্টার লঞ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক:অরক্ষণীয়া উপন্যাসটি প্রথম পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে। অরক্ষণীয়া সেই সময়কার গোঁড়া হিন্দু সমাজব্যবস্থার প্রতি লেখকের এক নিদারুণ কটাক্ষ। যে সমাজ ত্রয়োদশবর্ষীয়া মেয়েকে আইবুড়ো মনে করে, সমাজের কলঙ্ক মনে করে কিন্তু আগ বাড়িয়ে কেউ তার বিয়ের দ্বায়িত্ব নিতে চায় না। সদ্য স্বামী হারানো দুর্গা হঠাৎ বুঝতে পারে এতদিন স্বামী জীবিত থাকতে যে প্রশ্ন বাড়ির লোকে—পাড়ার লোকে তোলার সাহস পায়নি স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে সে প্রশ্নের বাণে আজ সে বিদ্ধ। কিন্ত সহায় সম্বলহীনা, বাপ মরা এবং সমাজের চোখে রঙ ময়লা কুশ্রী জ্ঞানদাকে কে বিয়ে করবে, কে বিয়ে করে সমাজের মুখটা বন্ধ করবে, সে প্রশ্নের জবাব দুর্গামণি জানেন না।

উপন্যাসে আমরা আরেকটি চরিত্র দেখতে পাব যার নাম অতুল, সে উপন্যাসের প্রধান পুরুষ চরিত্র। এই গল্পে আমরা অতুল এবং জ্ঞানদার মধ্যে এক সুন্দর সখ্যতার সম্পর্ক দেখতে পাব। একটা সময় যখন জ্ঞানদার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন অতুল জ্ঞানদা এবং তার পরিবারের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। এদিকে দুর্গামণি মনে মনে স্থির করে জ্ঞানদার সাথে অতুলের বিয়ে দিবে। অতুলও জ্ঞানদার পিতার মৃত্যুশয্যায় তাকে কথা দিয়েছিল যে সে জ্ঞানদাকে বিয়ে করবে। কিন্তু দুর্গামণি অতুলের সাথে জ্ঞানদার বিয়ের কথা তুললে অতুল রীতিমত বিবাহ করতে অস্বীকার করে। দুর্গামণির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। এতদিনের স্বপ্ন, চিন্তাভাবনা যেন সব নিমিষেই ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়।

অতুলের কথায় আশায় বুক বাঁধতে থাকা স্বপ্নটাও যখন এক্কেবারে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তখন আর দুর্গা পেরে উঠেন না, রোগে শোকে ভুগে পরপারে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। আর জ্ঞানদা জ্যাঠিমা— মামা— কাকা ইত্যাদির হাতে নিত্য তিরষ্কৃত হতে থাকে।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে নিজের মহিমায় সগর্বে পাঠকদের মন জয় করে নিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। তাঁর যেকোন রচনা পাঠ করেই অন্তরে একটা ভীষণ উপলব্ধির জগৎ সৃষ্টি হয়। গ্রামবাংলার জনজীবনের সাধারণ রূপ তাঁর অসাধারণ বর্ণনায় চোখের সামনে বাস্তব, প্রাণবন্ত হয়ে ধরা দেয়। ‘অরক্ষণীয়া’ উপন্যাসের প্রতি পরতে পরতে সেই রূপ ধরা পড়েছে।

উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞানদার বিবাহের প্রাণান্ত চেষ্টা করা হয়। কালো বলে তার পাত্র জোটে না।

অরক্ষণীয়া উপন্যাসটিতে অতুল, স্বর্ণ, অনাথদের কুৎসিত, কদাকার সে রূপ যেমন কখনো ঘৃণার উদ্রেক করেছে, ছোটবৌ আর পোড়াকাঠের অনাকাঙ্ক্ষিত মমতার প্রতি মনের অজান্তেই শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়েছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে কুশ্রী কন্যার বিবাহের জন্য মনের আশঙ্কা, অতুলের দেওয়া কথায় সে আশঙ্কায় আশার সঞ্চার আর সবশেষে অতুলেরই প্রবঞ্চনায় আশাহত এক মা এবং মায়ের সব লাঞ্ছনা, গঞ্জনা নীরবে মেনে নিয়ে সেই মাকে কষ্ট দিতে না চাওয়া কলঙ্কের কালিমায় জর্জরিত কন্যা জ্ঞানদার নিদারুণ কষ্টের বর্ণনা মনের অজান্তেই হৃদয়ের একটা উপলব্ধির সঞ্চার করে— এ উপলব্ধি সহানুভূতি কিংবা সমবেদনার নয়, এ উপলব্ধি বাস্তবতার নির্মম রূপের উপলব্ধি।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর এহেন উপন্যাস ‘অরক্ষণীয়া’ অবলম্বনে পূর্ন দৈর্ঘ্যের ফিচারফিল্ম তৈরি করলেন যুগ্ম পরিচালক ইয়াসমিন ইব্রাহীম ও সর্বজিৎ মণ্ডল ।

নির্দেশক সর্বজিৎ মণ্ডল প্রেস ক্লাবে ছবির পোস্টার লঞ্চ অনুষ্ঠানে জানালেন, “আগামী ২৬ এপ্রিল মুক্তি পাবে এই বাংলা ছবি।”

‘দ্য হোয়াইট হর্স এন্টারটেনমেন্ট’ নিবেদিত এবং ইয়াসমিন ইব্রাহীম ও সর্বজিৎ মণ্ডল নির্দেশিত বাংলা কাহিনীচিত্র ‘অরক্ষনীয়া’র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা নবাগত অপলক যশ, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সোমা চক্রবর্তী, তমাল রায়চৌধুরী, রাজু মজুমদার ও দেবাশিস গাঙ্গুলী সহ একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রীকে।

সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ছবির কলাকুশলীদের উপস্থিতে ছবির পোস্টের লঞ্চ হয়ে গেল।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top