Close

শতবর্ষে ভানু

By Ramiz Ali Ahmed

তার আসল নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ওই নামে তাঁকে পরিবারের সদস্যরা ছাড়া কেউই হয়তো চেনেন না। কিন্তু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বললেই আমারা সকলেই লাফিয়ে উঠি।আজ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০০ বছর।ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়-
বাংলা সিনেমা জগতে এক চিরকালের নাম। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অবিকল্প। কিন্তু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুই কি নিছক একজন কমেডিয়ান? স্বাধীনতা সংগ্রামী, রস সাহিত্যস্রষ্টা থেকে একজন দরদী মানুষ ‘ভানু’কে কয়জনই বা জানেন !

১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট ঢাকা পূর্ববঙ্গ ব্রিটিশ রাজ্যে এখন যা বাংলাদেশে সেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জিতেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বাবা ছিলেন নবাব এস্টেটের উচ্চপদস্থ চাকুরে। এবং মাতা সুনীতি বন্দোপাধ্যায়,তিনি ছিলেন সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করা প্রথম মহিলা স্কুল ইন্সপেক্টর। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল তারপর জগন্নাথ কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৪১ সালে। এরপর তিনি চাকরি করেন আয়রন এন্ড ষ্টীল কোম্পানি নামে একটি সরকারি অফিসে এবং পরে বালিগঞ্জের অশ্বিনী দত্ত রোডে তার বোনের কাছে দু বছর থাকার পর টালিগঞ্জের চারু এভিনিউতে বাস করতে শুরু করেন।

১৯৪৬ সালে তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন নীলিমা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তার তিন সন্তান গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়,বাসতি ঘটক বন্দোপাধ্যায় এবং পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিয়ের তিন দিন বাদে শ্বশুরঘর থেকে মেয়ে এসেছে বাপের বাড়ি। তাকে বাড়ির দোরগোড়ায় নামিয়ে জামাই গেছে কাজে। এদিকে বিকলে পেরিয়ে সন্ধে গড়িয়ে রাত গভীর। তাতেও জামাইয়ের দেখা নেই। সময়টা ১৯৪৬। ফেব্রুয়ারি মাস। শীতের রাত। রাস্তাঘাট শুনশান। বাড়ির সবাই খেয়েদেয়ে একে একে শুয়ে পড়েছে।

বাধ্য হয়ে শ্বশুরমশাই খুঁজতে বেরোলেন জামাইকে। আর কিছুক্ষণ পরে বাবাজীবনকে আবিষ্কার করলেন কাছেই রাধা ফিল্ম স্টুডিওয়। ছেঁড়া চিটচিটে একটা ত্রিপল জড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে। তার ফাঁকফোকর দিয়ে যতটুকু শরীর দেখা যায়, তাতে ভরতি ঝুল, কালি, ময়লা! এক মুহূর্ত আর সময় নষ্ট না করে গরগর করতে করতে বেরিয়ে এলেন তিনি! এই ছেলের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন!ভানুর শ্বশুর বাড়ি ছিল একেবারে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশের বাড়ি। রাধা ফিল্ম স্টুডিওর কাছেই। যেখানে প্রথমদিকে দূরদর্শনের অফিস ছিল। ভারতলক্ষ্মী স্টুডিও-ও তাই। যেটা এখন নবীনা সিনেমা। তখন ভানু আয়রন অ্যান্ড স্টিল-এ চাকরি করেন। অফিস থেকে ফিরে স্ত্রীকে পৌঁছে দিয়ে বললেন, ‘রাধা-য় কাজ আছে। আসছি।’ তারপর তো ওই কাণ্ড! রাধায় পৌঁছে শ্বশুরমশাই দেখলেন, শুনলেন শুটিং চলছে, তখনও অনেক কাজ বাকি। এই শু‌নে বাড়ি ফিরে গুম মেরে বসে রইলেন। সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। রাত দুটো, কী আড়াইটের সময় কথাবার্তার আওয়াজ পেয়ে নীলিমা দেবী উঠে দেখেন নীলিমা দেবীর মা অর্থাৎ ভানু বাবুর শ্বাশুড়ি মা তার জামাইকে তোয়াজ করে খাওয়াচ্ছেন। সেই প্রথম ছবি।

ছবির নাম ‘জাগরণ’।১৯৪৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল। বিভূতি চক্রবর্তীর নির্দেশনা। ডেকেছিলেন উনিই। যেতেই বলেছিলেন, “দুর্ভিক্ষের সময়কার এক হাড়গিলে চিমসে মার্কা চেহারার লোক। তারই চরিত্রে অভিনয়। করো যদি বলো।” শোনামাত্র রাজি। তারপর তো যা হওয়ার হলো। দ্বিরাগমনের আগে-পরের গপ্পো এবং প্রথম ছবিতে অভিনয়ের নেপথ্য কাহিনি।

ঐ বছরেই মুক্তি পায় ‘অভিযোগ’।তারপরে প্রত্যেকটি বছরই তিনি অনেকগুলো সিনেমা করে আমাদেরকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৫২ সালে ‘পাশের বাড়ি’, ১৯৫৩ সালে ‘মহারাজা নবকুমার’,’সাড়ে চুয়াত্তর’-এই ছবির মাধ্যমেই ভানু দর্শকদের নিজের অভিনয়ের গুণে আকৃষ্ট করা শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে ‘ওরা থাকে ওধারে’, ১৯৫৫ সালে ‘দস্যু মোহন’, ১৯৫৬ সালে ‘একটি রাত’,১৯৫৮ সালটি ভানুর জীবনে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ওই বছরে মুক্তি পাওয়া অনেক ছবির মধ্যে দু’টি ছিল ‘ভানু পেল লটারি’ এবং ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’- এর মধ্যে প্রথম ছবিটি থেকে ভানু-জহরের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল।

‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’ বাংলা ফিল্ম ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন।‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’-এর আরেকটি অসামান্য মুহূর্ত ছিল “হাম-হাম-গুড়ি-গুড়ি নাচ”, যেটা ভানু ঊর্বশীকে শেখাচ্ছিলেন! বাংলা কমেডি ছবির ইতিহাসে এই দৃশ্যটি অমর হয়ে থাকবে।১৯৫৯-এ মুক্তি পায় ‘পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’- এই ছবিতে ভানু নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন, বিপরীতে ছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা।
১৯৬৬ সালে ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘গল্প হলেও সত্যি’, ১৯৬৭ সালে ‘আশিতে আসিও না’,’মিস প্রিয়ংবদা’, ১৯৬৮সালে ‘চৌরঙ্গী’, ‘পথে হল দেরি’, ‘বাঘিনী’, ১৯৭০ সালে ‘সাগিনা মাহাতো’।১৯৭১ সালে ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিসেন্ট’ মুক্তি পেয়েছিল।ভানু-জহর জুটির এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ ছবি বলা যেতে পারে।


১৯৭৫ সালে ‘কবি’, ‘প্রিয় বান্ধবী’। ১৯৭৬ সালে ‘নন্দিতা’, ১৯৭৭ সালে ‘অসাধারণ’, ১৯৭৯ সালে ‘দেবদাস’, এবং ১৯৮২ সালে ‘প্রেয়সি’, ১৯৮৩ সালে ‘শহর থেকে দূরে’, এবং সর্বশেষ চলচ্চিত্র ১৯৮৪ সালে ‘শোরগোল’।মাসিমা, মালপো খামু!”-বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যদি সেরা দশটি সংলাপের তালিকা কোনোদিন তৈরি হয়, তাহলে এই সংলাপটি নিশ্চিতভাবে তার মধ্যে স্থান পাবে।১৯৫৩ সালে নির্মল দে পরিচালিত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তাঁর বলা ‘মাসিমা, মালপোয়া খামু’ সংলাপটি আজও অমর। এই দৃশ্যটি নিখুঁত ভাবে তুলে ধরতে তাঁকে ২৪টি মালপোয়া খেতে হয়েছিল।
হিন্দিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে সত্যেন বসুর ‘বন্দীশ’ (১৯৫৫), দুলাল গুহর ‘এক গাঁও কি কহানি’ (১৯৫৭), তপন সিংহের ‘সাগিনা’ (১৯৭৪) প্রভৃতি ছবিতে।
ভানু সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে’, ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’র মতো ছবিতে। ‘নির্ধারিত শিল্পীর…’ ছবিতে তার মেয়ের চরিত্রে দেখা যায় তার নিজের মেয়ে বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভানু নিজে প্রযোজনা করেন ‘কাঞ্চনমূল্য’ (১৯৬১)। এতে তার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ভানুর বড় পুত্র গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশু শিল্পী রূপে।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।চিৎপুরের যাত্রার মঞ্চেও ছিল ভানুর সমান আধিপত্য।শুধু অভিনয় নয়,সংলাপ লেখা ও গানও গেয়েছেন অনেক।ভানুর কৌতুকের অডিও আজও রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হয়।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস খুব স্নেহ করতেন, এই বুদ্ধিমান কিশোরকে তার জন্মদিনে বাঘা বাঘা বৈজ্ঞানিক বন্ধুরা যখন বাড়িতে আসতেন। এই ছেলেটির কৌতুক নকশা শুনিয়ে জ্ঞানীগুণী অধ্যাপক কে বসিয়ে রাখতে পারতেন অন্তত ঘন্টাখানেক। আমৃত্যু অধ্যাপক বোসের এই ভালোবাসা অটুট ছিলো। কবি মোহিতলাল মজুমদার, কবি জসীমউদ্দীন, রমেশচন্দ্র মজুমদারের মাস্টারমশাইদের স্নেহ ভালোবাসা নিয়ে তিনি খুব গর্ব করতেন। সমাজতন্ত্রের আদর্শে তার গভীর বিশ্বাস ছিল গর্ব করে বলতেন আমার মায়ের বাবা আমার নাম রেখেছিলেন সাম্যময়। তিনি বলতেন “আই এম আ কমিউনিস্ট , আই বেয়ার ইট ইন মাই নেম।”কেউ চোখের পাতা এ পাশ ও পাশ করলে ধরে ফেলতে পারতেন, মনের মধ্যে কী চলছে। কথা বলার ফাঁকে গলা সামান্য কাঁপলে বুঝে যেতেন সত্য বলছে নাকি অসত্য।একটা কথা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি প্রায়ই বলতেন, ‘আমাগো দ্যাশে এইটাই ট্র্যাজেডি, কমেডিয়ানরে লোকে ভাঁড় ভাবে!’ আর তাঁকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় বলেছেন, ‘ভানু অজস্র ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং যেখানে বিশেষ কিছু করার নেই সেখানেও করেছেন। আশ্চর্য এই যে, যা–ই করেছেন, তা বহরে ছোট হোক বা বড়ই হোক, তার মধ্যে তাঁর সাবলীলতার পরিচয় রেখে গেছেন। সর্বজন প্রশংসিত বিরল অভিনেতাদের মধ্যে ভানুবাবু একজন।’

ঘটনাবহুল তার জীবন।বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায় তিনি ছিলেন বিপ্লবী, স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবনে সে সময়ের নিষিদ্ধ বই, অস্ত্র নিয়ে পাচার করতেন বলে বিভিন্ন লেখায় জানা যায়। একসময় বাধ্য হয়েই বন্ধুর গাড়ির ব্যাক সিটের পাদানিতে শুয়ে কলকাতায় পালিয়ে গিয়েছিলেন সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে গিয়ে হয়ে উঠেছিলেন ভানু। অনেক গল্প তাকে নিয়ে।বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা থেকে জানা গিয়েছে-অভিনয়ের পাশাপাশি তার খেলার জগৎ নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল। খেলা বলতে ফুটবল। ইস্টবেঙ্গল অন্তঃপ্রাণ। যখন চাকরি করতেন, ইস্টবেঙ্গলের খেলা মানেই অফিস ফাঁকি দিয়ে মাঠে হাজির হয়ে যেতেন।মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে শচীন দেব বর্মন আর হিমাংশু দত্ত আসতেন মাঠে। বিরতির সময় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ম করে শচীন দেব বর্মন আর হিমাংশু দত্তর হাতে তুলে দিতেন এক খিলি পান আর চিনাবাদাম।

একদিনের ঘটনা। কলকাতার হাতিবাগানপাড়ায় গিয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় দেখলেন একদল তরুণ ছেলে অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীকে রাস্তায় ঘিরে ধরেছেন। ধুতির কোঁচা ধরে, জামা ধরে টানছেন। এ দৃশ্য দেখে মাথায় রক্ত উঠে গেল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গাড়ির দরজা খুলে সোজা গিয়ে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়লেন। একাই। এক-একজনকে কিল, ঘুষি, লাথি। নিমেষে সবাই হাওয়া। তরুণেরা পালিয়ে গেলেন। অবশ্য তুলসী চক্রবর্তী উল্টো ভাব দেখালেন। বললেন, ‘আহা, অত রাগিস কেন, একটু মজা করে যদি ওরা আনন্দ পায়, পাক না। খামোখা মারলি!’

সেই সময় বিখ্যাত তারকা যেমন উত্তম কুমার সুচিত্রা সেন এদের সঙ্গেও তিনি বেশ জনপ্রিয়তায় সমানে সমানে টেক্কা দিতেন। তাকে দেখার জন্য ভিড় জমিয়ে সাধারণ মানুষ। তিনি পিজি উড হাউস এর লেখা আর চার্লি চ্যাপলিন এর ছবির খুব বড় ভক্ত ছিলেন।
ষাটের দশকের শেষদিকে টলিউডের শিল্পীদের মধ্যে একটা মনোমালিন্য দেখা গিয়েছিল। সেই সময় উত্তম কুমার এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলে গিয়েছিলেন দুই বিপরীত দিকে। তেমনই আবার ভানু বন্দোপাধ্যায় এবং জহর রায়ের জুটি ভেঙে গিয়েছিল।৬০-এর দশকের শেষ দিকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না বলে ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল সিনেমার সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদেরও মধ্যে। যার ফলে বেশ কিছু দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় ‘‌সিনে টেকনিশিয়ানস ওয়াকার্স ইউনিয়ন’‌।১৯৬৮ সালে যখন এই ধর্মঘট শুরু হয় তখন ‘‌অভিনেত্রী সঙ্ঘ’ তা নৈতিক সমর্থন করে। তখন ‘অভিনেত্রী সঙ্ঘ’‌–এর সভাপতি ছিলেন উত্তমকুমার এবং সম্পাদক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এদিকে রাজ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার থাকায় কর্মচারি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলিরও তখন বেশ জঙ্গি মনোভাব। সেই সময় আবার গঠিত হয় ‘‌পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতি’‌ এবং এই সংগঠনে পুরোভাগে ছিলেন উত্তমকুমারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন প্রযোজক।
ওই সময় ‘অভিনেত্রী সঙ্ঘ’র একাংশ সঙ্ঘের তহবিল থেকে দশ হাজার টাকা ধর্মঘট কারীদের দিতে চায়। কিন্তু তা নিয়ে মতভেদ দেখা যায় ৷ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপকুমাররা ছিলেন টাকা দেওয়ার পক্ষে কিন্তু বিকাশ রায়,জহর গঙ্গোপাধ্যায়রা তার বিরোধিতা করেন৷ এদিকে উত্তমকুমার প্রযোজকদের প্রতিনিধি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।তা নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে উত্তমকুমার সৌমিত্র এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর প্রচন্ড রেগে যান৷ ফলে পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে দাঁড়ায় যে সদস্যেদের মধ্যে ভোটাভুটি করতে হয়৷ আর সেই ভোটে জিতে অভিনেত্রী সঙ্ঘের সভাপতি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ এর পর যথারীতি সঙ্ঘ ধর্মঘটীদের দশ হাজার টাকা দেয়৷
অন্যদিকে উত্তমকুমার ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্ঘ ছেড়ে এসে তৈরি করেন ‘শিল্পী সংসদ’৷ উত্তমের সঙ্গে শিল্পী সংসদে তখন বিকাশ রায়ের পাশাপাশি চলে এসেছিলেন জহর রায় ৷ অন্যদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়েরা অভিনেত্রী সংঘে৷আপাতভাবে মনে করা হয়ে থাকে বামপন্থীরা তখন ‘‌অভিনেত্রী সঙ্ঘ’‌–তে এবং কংগ্রেসী সমর্থকরা যোগ দিয়েছেন ‘‌শিল্পী সংসদ’‌–এ। তবে অনিল চট্টোপাধ্যায়, নির্মল ঘোষের মতো শিল্পীরাও কিন্তু শিল্পী সংসদে যোগ দিয়েছিলেন ৷ মতাদর্শের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সংঘাতও সেই সময় কাজ করেছিল বলে অনেকে মনে করেন ৷

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহধর্মিণী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনকার দিনের নামী গায়িকা ছিলেন।নীলিমা দেবী ‘কবি চন্দ্রাবতী’, ‘বনের ময়ূর’, ‘সর্বহারা’, ‘কাঞ্চন মূল্য’, ‘বৌ ঠাকুরানির হাট’ প্রভৃতি ছবিতে তিনি গান করেছেন।

১৯৮৩ সালের ০৪ মার্চ কলকাতার উডল্যান্ডস হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন আপামর বাঙালির প্রিয় অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আজীবন যিনি বাঙালিকে হাসিয়েছেন, সেই তিনিই নিজের শেষযাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, ততদিন স্বমহিমায় বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top