যে নারীর কথা লিখছি তিনি খুব বেশি লেখাপড়া জানতেন না।কম বয়েসে মাতৃপিতৃহীনা।পিতা মাতাও খুবই ভালোমানুষ ছিলেন।পিতা উচ্চশিক্ষিত এবং ভালো সরকারি চাকুরী করতেন।চাচাজি হোমিও ডাক্তার ছিলেন।চাচা অনাথ এই ভ্রাতৃকন্যাকে কন্যা স্নেহে পালন করেন।কিছু লেখাপড়াও শেখান।তখনকার দিনে গ্রামের মেয়েদের খুব কম বয়সে বিবাহ দেওয়া হত।চাচা ও চাচী এই কন্যার বারো বছর বয়সে বিবাহ দেন কমবয়সে পিতৃহীন এক মেধাবী ছাত্রের সাথে।তখন বি.কম. অনার্স পাঠরত আঠারো বছরের ছেলেটিকে তাঁর চাচার খুব পছন্দ হয়েছিল মেধা,ব্যক্তিত্ব ও সততার জন্য।ছেলেটি ভালো সৎ বংশের এক কবিরাজের পুত্র।নাম রওশন আলি মল্লিক।বি.কম. অনার্স পড়ার সময় থেকেই রওশন আলি মল্লিক বামপন্থী সংগঠনে আসেন নিপীড়িত,শোষিত,বঞ্চিত গরীব মানুষের জন্য।মানবতার জন্য,সাম্যের জন্য এই সংগঠনের পথ ছিল খুবই কঠিন,তবুও তাদের দলিজ বাড়িতে বহু মানুষকে সাথে নিয়ে মিটিং হতো।তাঁর স্ত্রী রওশনারা বেগম অন্দরমহলে রান্না করতেন সংলগ্ন জমির সব্জী ধুয়ে সুন্দর সুস্বাদু তরকারি করতেন।ভাত ও তরকারি রান্না করে ছেলেমেয়েদের দিয়ে পাঠাতেন দলিজ বাড়িতে থেকে যাওয়া দূরের কমরেডদের জন্য।অন্দরমহলের বাইরে তিনি খুব একটা বের হতেন না।কিন্তু সংগঠনের কাজে সহযোগিতা এইভাবে করে গেছেন অন্দরমহল থেকেই।তাঁর স্বামী রওশন আলির অকাল প্রয়াণের পর পার্টির কাছ থেকে কোনো সাহায্য না নিয়েই তিনি নিজে চিরকাল গরীব, নিপীড়িত,বঞ্চিত অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন।কে কোন রাজনীতির সমর্থক বা কার কোথায় বাড়ি এসব কিছুই দেখতেন না।দারিদ্রের কথা শুনে তিনি যেভাবে পারতেন সাহায্য করতেন।হুগলি জেলার ধনিয়াখালী থানার হিরণ্যবাটি গ্রামে দয়ালু এই মহিয়সী নারী কখনো নিজের প্রচার চান নি।তিনি নীরবে গরিব,দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন।দু বছর আগে আজকের তাঁর এন্তেকাল দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাত বাসী করুন এটাই আমাদের প্রার্থনা।