Close

স্যানিটারি প্যাডে আর্টওয়ার্ক, প্রতিবাদও শিল্প হয়, কলকাতা আর্ট ফেয়ারে অন্যরকম ছবির হদিস

✍️By Ramiz Ali Ahmed

ইমলি কৃষ্ণা এর এক অভিনব মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যকে ছবির বিষয় করে তুলেছেন। স্যানিটারি প্যাডে তাঁর আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে আইসিসিআর এর যামিনী রায় গ্যালারিতে। শ্যাম সুন্দর কোং জুয়েলার্স নিবেদিত কলকাতা আর্ট ফেয়ার এর তৃতীয় সংস্করণে নানা রকম ছবি, আঁকা এবং স্হিরচিত্র, স্হাপত্য নিয়ে ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রায় হাজার এর উপর শিল্পীর কাজ এবারের প্রদর্শনীতে সামিল হয়েছে। মোট চারশো মতো শিল্পকর্ম এর মধ্যে বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে ইমলি কৃষ্ণা এর স্যানিটারি প্যাডে আঁকা ছবি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত। উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পী সমীর আইচ, দেবজ্যোতি মিশ্র।

ছবির বিষয় ভাবনা নিয়ে শিল্পী জানান, “ছবির নাম লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে।
আমাদের সমাজে নারীদের দেবীর দরজা দেওয়া হয়েছে, মেয়েদের প্রশংসা করতে হলে তাদের রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী বলা হয়। বাড়ির বড়রা আশীর্বাদ করার সময়ও আমাদের এটাই বলে থাকেন লক্ষীমেয়ে হয়ে থাকবে। কিন্তু এই লক্ষী মেয়ের মধ্যে যেদিন প্রতিবাদী সত্তা জন্মে যায়, সে কোথাও না কোথাও একটু হলেও লক্ষী থেকে অলক্ষী হয়ে ওঠে।” তিনি আরো বলেন, ” আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, হ্যাঁ ওই লক্ষী মেয়ে বলতে পারেন, ছোট থেকেই মা ঠাকুমাদের সাথে লক্ষ্মীপূজোয় আলপোনা দেওয়া, নাড়ু পাকানো সবকিছু শিখেই বেড়ে উঠেছি, তবে যেটা শিখতে পারিনি, সেটা হচ্ছে আমাদের এই যুক্তিহীন আচার বিচার!
সেরকম এক ভরা কোজাগরি পূর্ণিমার দিন, আমার মাসিক অতিথি দরজায় কড়া নাড়লো। হঠাৎই আমার চেনা আপনজনরা, আমার বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠারা সমাজের চৌকিদার হয়ে আমায় পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন যে এখন আমার গায়ে বদ রক্ত লেগে রয়েছে, তাই আমি পুজোর কোন জিনিস ছুলে সেটা অপবিত্র হয়ে যাবে। আমার এই কদিন আর ঠাকুর ঘরে কোন জায়গা নেই।
আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম মা লক্ষ্মীর শরীর খারাপ হলেও কি ঠাকুর ঘর থেকে তাড়িয়ে দাও তোমরা? ব্যাস আর কি, সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেললেন, আমি নাকি অলক্ষ্মীর মত কথা বলছি।
যদি মাসিক হলে আমরা মেয়েরা বদ রক্ত গায়ে নিয়ে ঘুরি তাহলে, তাহলে এ পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা জীব সেই বদ রক্তের প্রতীক। মানে সাধারণ বিজ্ঞান টুকু যদি আমরা জেনে থাকি তাহলে আমরা সবাই জানি যে ওই রক্তের প্রত্যেকটি বিন্দু দিয়ে যে কোন মানুষ তথা জীবের সৃষ্টি।


এই বদ রক্ত না থাকলে সৃষ্টি আটকে যেত। আমার শুধু এটুকুই প্রশ্ন, প্রকৃতির এই অমগ্ন নিয়ম, এই মাসিকের জন্য জগত সংসার চলছে, যার জন্য পৃথিবী এখনো জীবিত, সে কথাটা নিয়ে এত লুকোচুরি কিসের, এত ঢাকা চাপা কিসের?প্রকৃতির এই অপূর্ব সুন্দর উপহারটাকে আমরা কেন লজ্জা বলে ঢেকে রাখি?”

কলকাতা আর্ট ফেয়ার এর সম্পাদক ও আয়োজক মেহতাব হোসেন মোল্লা জানান, “এই কলকাতা আর্ট ফেয়ার এর প্রধান উদ্দেশ্য হল শহর কলকাতা তার শিল্প, কৃষ্টি, সংস্কৃতিতে কতটা পরিপূর্ণ তা সকলকে একবার মনে করিয়ে দেওয়া। এছাড়া চিত্রকলা, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, গ্রাফিক্স নিয়ে যে সব নতুন নতুন অভাবনীয় কাজ হচ্ছে তা জানানোর জন্যই এই আর্ট ফেয়ার। এছাড়া এখন থেকে শিল্পীদের রোজগারেরও ব্যবস্থা করা হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে যেসব নতুন শিল্পীরা উঠে আসছেন তাঁদের জন্য এটা একটা প্ল্যাটফর্ম। এই আর্ট ফেয়ারের মাধ্যমে আমরা তাঁদেরকে সাহায্য করতে পারি এবং তাঁদের ভবিষ্যতকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে গিয়ে যাতে কোন বাধা না পেরোতে হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।”
শ্যাম সুন্দর কোং জুয়েলার্সের আরেক ডিরেক্টার রূপক সাহা বললেন, “কলকাতা আর্ট ফেয়ারের এই তৃতীয় সংস্করণটি উপস্থাপন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই উদ্যোগ মানুষের থেকে অভাবনীয় সাড়া পাবে আশা রাখি। সেই সঙ্গেই এই বহু প্রতীক্ষিত বার্ষিক প্রদর্শনীটি ইতিমধ্যেই শহরের ইভেন্ট ক্যালেন্ডারে তার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে।”সঙ্গীত রচয়িতা দেবজ্যোতি মিশ্র বললেন, “এই উৎসবের কোর টিমের একজন সদস্য হিসেবে এবং শেষমেষ কলকাতা আর্ট ফেয়ার ২০২৩ হচ্ছে এই ভেবে আমি আনন্দিত। আমরা খুবই আশাবাদী যে শেষ দুটি সংস্করণের মতোই এবারও এই উদ্যোগ সফল হবে।”

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top