Close

‘শহরের উপকথা’র ট্রেলার,মিউজিক ও পোস্টার লঞ্চ

✍️By Ramiz Ali Ahmed

নটরাজ ফিল্ম অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট নিবেদিত শ্রী কৃষ্ণ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মস প্রযোজিত বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটক অবলম্বনে পরিচালক বাপ্পা’র বহু প্রতীক্ষিত ও আলোচিত ছবি ‘শহরের উপকথা’র ট্রেলার,মিউজিক ও পোস্টার রিলিজ অনুষ্ঠান হয়ে গেল অভিনেতা,অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের উপিস্থিতিতে কলকাতার ট্রাম ডিপো রেস্টুরেন্টে।

ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন বাংলাদেশের আশরাফ শিশির।তিনি ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে কিভাবে বাদল সরকারকে উপস্থিত করেছেন সেটাও এই ছবির একটা আলোচিত বিষয়।বাদল সরকারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়।বাদল সরকারের লুক যখন আমরা দেখি অবাক না হয়ে পারা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে অভিনেতা জানালেন,”আমাকে বাপ্পা যখন প্রথম বাদল সরকারের ভূমিকায় অভিনয় করার কথা বলে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। আমার চেহারা, মুখ,নাক কোনো কিছুর সঙ্গেই বাদল সরকারের কোনও মিল নেই । তারপর লুক টেস্টের পর আমি সত্যিই অবাক হয়েছি নিজেকে দেখে। তবে আমি এই লুকের জন্য কৃতিত্ব দেবো মেকআপ শিল্পী মহম্মদ আলিকে।এখানে কোনও প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার হয়নি। নিজের শৈল্পিক কলা দিয়ে আমাকে বাদল সরকার করে তুলেছেন মহম্মদ আলি।”তিনি আরো জানান,”চরিত্রটা বাদল সরকারের মত ব্যক্তিত্বের সেটা তো চ্যালেঞ্জি বটেই। যিনি বাংলায় থার্ড থিয়েটার নামক ভিন্নধারার নাটকের জনক। বাদল সরকারকে খুব সামনে থেকে দেখার এবং তাঁর নাটক দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র হওয়ার সুবাদে ওনার নাটক দেখার সুযোগ হয়েছে। আমাদের স্কুলের নিচে বিশাল হলঘরে উনি নাটক করাতে আসতেন। সেখানে আমি ওনার নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তখন অবশ্য থার্ড থিয়েটার ফর্মটার বিষয় জানতামও না। পরবর্তীকালে আমি বিভিন্ন জায়গায় ওঁর নাটক দেখেছি। ওনার চালচলন, হাবভাব সবই সামনে থেকে দেখা। যেগুলো এই ছবিতে কাজে লেগেছে।”

‘বাকি ইতিহাস’নাটকটিকে বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরা হয়েছে।কিন্তু ‘বাকি ইতিহাস’ তো নাটক,সেই নাটকে নাট্যকার বাদল সরকার কিভাবে আসবে?এই প্রশ্ন করতেই অভিনেতার উত্তর,”প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক,আর সেটা তো বলা যাবে না।এটার ক্রেডিট অবশ্যই চিত্রনাট্যকার আশরাফ শিশিরের।কিভাবে নাটকে চিত্রনাট্যকার কিভাবে নাট্যকারকে উপস্থিত করলেন সেটা অবশ্যই দেখার।ছবিটি ১৭ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে।আপনারা ছবিটা অবশ্যই দেখবেন প্রেক্ষাগৃহে।”

এই ছবিতে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয় সেনগুপ্ত, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, বাসব দত্তা চট্টোপাধ্যায়, লামা , রজত গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।

ছবিতে মোট তিনটি গান আছে।সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সৌম্য ঋত।

ছবির প্রযোজক সন্দীপ মন্ডল সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন,”আমরা প্রায় দু বছর ধরে ছবিটা বানিয়েছি।বাপ্পা ছবিটা খুব প্যাশনেটলি বানিয়েছে।প্রত্যেকটি অভিনেতা অভিনেত্রীও যখন যেখানে শুটিং হয়েছে তাদের স্টারডাম দূরে সরিয়ে রেখে খুব সাধারণ জায়গাতে থেকেও শুটিং করেছেন।এজন্য আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।ছবিটা একদম অন্যরকমের ছবি হয়েছে।”

ছবির অন্যতম চরিত্র জয় সেনগুপ্ত বললেন,”বাদল সরকার চিরকাল যে নাটকগুলো লিখেছেন সেগুলো কালজয়ী নাটক,সেগুলো বিপ্লবী নাটক ছিল।সমাজের সামনে আয়না ধরার নাটক ছিল এবং কোথাও না কোথাও সবার ভিতরে একটা নাড়া দেওয়ার নাটক লিখতেন । সেটাকেই পরিচালক বাপ্পা ধরার চেষ্টা করেছে।যদিও নাটকটা ১৯৬০-এ লেখা।সেই সময়ে সমাজের যে ক্রাইসিসগুলো ছিলো সেগুলো বাদল সরকার ধরার চেষ্টা করেছিলেন,মানুষের মনকে ভিতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন তিনি,যেসব মানুষগণ তখনও ঘুমিয়ে রয়েছেন তাদের জাগানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি।’শহরের উপকথা’-তে বাপ্পা সেগুলো ইন্টারপ্রিয়েট করেছে ২০২১-এ।আজকের সমাজে যে ক্রাইসিস গুলো চলছে সেখানে দাঁড়িয়ে যেসব মানুষজন এখনো চোখ বুজে আছে কান বন্ধ করে আছে তাদের কোথাও না কোথাও জাগানোর চেষ্টা এই ছবির মাধ্যমে।”

ছবির আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী।তিনি জানালেন,”প্রথম যখন বাপ্পা আমাকে ফোন করে তখন বাপ্পাকে চিনতাম না কিন্তু যখন বললো বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ অবলম্বনে ছবিটা হবে তখন ভীষণ ইন্টারেস্টেড হলাম।তখন আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি।বাদল সরকার কি বা বাংলা থিয়েটারে তাঁর কতটা অবদান সেটা তো আমার বলার অপেক্ষা থাকে না।তাঁর অসাধারন সব নাটক দেখেছি, পড়েছি।বাদল সরকারের অনেক নাটকের মধ্যে সিনেমাটিক উপাদান আছে,এটা আমার বরাবরই মনে হয়েছে।এই ছবির স্ক্রিপ্টটা পেলাম দারুন লেগেছিল, আর এই ছবিতে অভিনয় করে দারুন আনন্দ পেয়েছি।এতো ভালো ভালো সহ অভিনেতা পেয়েছি-জয়(জয় সেনগুপ্ত),শুভাশিস দা(শুভাশিস মুখোপাধ্যায়),রাহুল,লামা এদের সঙ্গে মেনলি আমার সিন ছিলো এদের সঙ্গে কাজ করে খুব ভালো লেগেছে।শুটিং-এর অভিজ্ঞতাটাও দারুন।স্কুল কলেজে পড়ার সময় যেরকম থিয়েটার করতাম সেই সময়ের কথা মনে পড়ছিলো।খুব আনন্দ করে কাজটা করেছি।”
ছবিটিতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদনা করেছেন অনির্বান মাইতি।এখন অপেক্ষা ১৭ সেপ্টেম্বরের।এই দিনই মুক্তি পেতে চলেছে ‘শহরের উপকথা’।ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে কতটা জাগাতে পারবে এই ছবি সেটা সময় বলবে কিন্তু বাপ্পার এই সাহসী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top