দমবন্ধকর লকডাউনের দিনে একছটা রুপোলি আভা নিয়ে ফোনের ওপারে ধরা দিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী “কে আপন কে পর“-এর মিট্টি ওরফে লাবনী ভট্টাচার্য,সঙ্গে আনন্দসংবাদ লাইভ-এর প্রতিনিধি আলাপন রায়।
প্রশ্ন: এইসময় ঠিক কেমন অনুভব করছেন?
লাবনী: এই লকডাউন আমার,আমার পরিবার,সবার কাছেই নতুন।এর আগে আমাদের এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।তাই সবার কাছে এটা একটা আলাদা অনুভূতি। খুব বাজে একটা অনুভূতি। কাজের ইচ্ছা থাকলেও কাজ করতে পারছিনা।কবে থেকে আবার নতুন কাজ শুরু হবে তাও জানা নেই।বিশেষ করে অভিনয় জগৎ কবে যে নিজস্ব ছন্দে ফিরতে পারবে,তা নিয়ে আমরা প্রত্যেকেই চিন্তিত। বলতে গেলে সময়টা একদমই ভালো নয়।
প্রশ্ন: কী মনে হয়,এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যেতে পারে?
লাবনী: সত্যি বলতে এই মুহূর্তে অনেকেই লকডাউন সঠিকভাবে পালন করলেও ইদানিং কিছু সংখ্যক মানুষ তা করছে না ।প্রথম ২০-৩০ দিন তারা ভালোভাবে মেনে চললেও এখন তা মানছে না।সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কিছু দোকান খোলা হয়েছে।মানুষজন সেখানে একসাথে গিয়ে ভিড় না জমিয়ে এক এক করে গেলে মনে হয় ,এর থেকে আমরা আরো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে পারবো।
প্রশ্ন: বিনোদন জগতের উপর এর প্রভাব কতটা পড়বে বলে মনে হয়?
লাবনী: পড়বে কী !ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ে গেছে।আমাদের এই পেশায় ৮০-৯০ জনের এক একটা ইউনিট লাগে।এত জমায়েত কবে করা যাবে তা জানা নেই।অন্যান্য পেশায় দেখলে,আইটি কর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ করছে,ব্যাবসায়ীরা দোকান খুলছে।এমন কি মাদক ব্যবসায়ীরাও দোকান খুলে ফেললো ।সরকারি কর্মীদের তো আলাদায় নিশ্চয়তা।কিন্তু আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি তো এখন চরম ধোঁয়াশায়।কবে কাজে ফিরতে পারবো কারুর জানা নেই।
প্রশ্ন: ঘরবন্দি জীবন কেমন কাটছে?
লাবনী: প্রত্যেকেই জানি কতটা দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। চারপাশটা খুবই নেতিবাচক।তাই আপাতত নিজেকে ইতিবাচক রাখার চেষ্টা করছি। বাড়িতে রান্না করছি,নাচ করছি,গল্পের বই পড়ছি,অনেক ওয়েব সিরিজ দেখছি এইভাবেই সময় কাটাচ্ছি।একদিক থেকে দেখলে এই পেশায় আমরা খুব কম সময় পায় পরিবারের সাথে সময় কাটাবার জন্য।মফস্বলের মেয়ে আমি,হুগলি জেলায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা।কাজের জন্য বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় থাকতে হয়।যার জন্য একটু মন খারাপ লাগতো। সেইদিক থেকে দেখলে এখন ভালোয় সময় কাটাচ্ছি।কাজের জন্য মাঝে মাঝে একটু মন খারাপ লাগছে।কিন্তু কিছু তো করার নেই,নিজেকে সামলে নিচ্ছি।
প্রশ্ন: বাড়ির সবাই তোমাকে কাছে পেয়ে কতটা খুশি?
লাবনী: বাড়িতে আমি ,বাবা আর ঠাকুমা তিনজনে থাকি।তারা তো আমাকে পেয়ে বেজায় খুশি।আর এখন তো বাড়িতে কোনো পরিচারিকা আসছেনা।তাই প্রতিদিন নিত্যনতুন রান্না করে দুজনকে খাওয়াচ্ছি।যেটা আমারও কোথাও না কোথাও দারুন লাগছে।তার উপর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য নিজেকে সেভাবে সময় দিতে পারতাম না।এখন একজন ঘরোয়া মেয়ের জীবন-যাপন করতে দারুন লাগছে।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে কোনো সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত আছো কী?
লাবনী: না,সত্যি বলতে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো কাজের সাথে যুক্ত হইনি।তবে ভবিষ্যতে অবস্থার আরও বেশি অবনতি হলে অবশ্যই সাহার্য্য করবো। কী বলতো,এই পেশায় আমরা প্রত্যেকেই খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে হাঁটছি।একবছর যদি কাজ বন্ধ থাকে তাহলে নিজেদের যাবতীয় খরচ নিজেদেরকে ওঠাতে হবে।মোট কতজনকে সাহার্য্য করতে পারবো জানা নেই,কিন্তু তাও নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করবো।
প্রশ্ন: আনন্দ সংবাদ লাইভ-এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে কী বার্তা দিতে চাও?
লাবনী: এটাই বলার বাড়িতে থাকুন।যা মন চাই তাই করুন।রান্না, নাচ,গান,আঁকা, আবৃত্তি যা ইচ্ছা করে তাই করুন।আমার বিশ্বাস সবার মধ্যে কিছু না কিছু প্রতিভা আছে।সেগুলো সবার সাথে মেলে ধরুন।বাড়িতে বসে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান।বাড়িতে থাকুন,সুস্থ থাকুন।