কারপাল টানেল সিনড্রোম একটি সাধারণ এবং ক্ষুদ্র সমস্যা। কিন্তু সচেতন না থাকলে এটি একটি মানুষকে অথর্ব বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে। কারপাল টানেল সিনড্রোম আমাদের হাতের তালুর অংশে একটি লিগামেন্ট আছে সেই লিগামেন্টের মধ্যে জল শুকিয়ে যায়। লিগামেন্টের মধ্যে যাত্রা হচ্ছে আমাদের হাতের সবচেয়ে সূক্ষ্ম স্নায়ু যার নাম মিডিয়ান নার্ভ।
এই রোগের উপসর্গ অনেক। বার্ধক্য রিউম্যাথয়েড অর্থাইটিস ,থাইরয়েডের রোগ, গর্ভাবস্থা কানেক্টিভ টিসু ডিসঅর্ডারস- ইত্যাদির সঙ্গে কারপাল টানেল সিনড্রোম হতে পারে। আজকাল যুবক-যুবতীরা তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যাচ্ছে। তার প্রধান কারণ হলো তাদের লাইফ স্টাইল। অনেকক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে টাইপিং এর কাজ কাজের প্রয়োজনে, অনেকক্ষণ গাড়ি বাইক চালানো বা কর্মসূত্রে অনেকক্ষণ এমন কিছু করা যাতে হাতের মাস পেশির উপর চাপ পড়ে এই কারণে অনেক অল্পবয়সিরা কারপাল টানেল সিনড্রোমে আক্রান্ত।
তাই কারপাল টানেল সিনড্রোম হয়েছে এটা বোঝার উপায়:
সবচেয়ে আগে রোগের উপসর্গ হলো অল্প হলেও চিনচিনে ব্যথা। ব্যথাটি আপনার বুড়ো আঙ্গুল দ্বিতীয় তৃতীয় এবং চতুর্থ আঙ্গুলের এক সাইডে মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। সময়ের সাথে ব্যথা বাড়তে থাকে সময়ের সাথে ব্যথারওষুধ খেলে বা ফিজিওথেরাপি করলেও ব্যথাটি যায় না।
অন্য যেকোনো নিউরোলজিক্যাল ব্যাথার মত এই ব্যথাটি রাতের দিকে বা ঘুম থেকে উঠলে বেশি বাড়ে। যত সময় যেতে থাকে এই ব্যথাটি আরো তীব্র হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে হাতের সূক্ষ্ম কাজকর্ম গুলি করতে বিফল হন।
অনেকের পেন দিয়ে লেখার অভ্যাস থাকলে হাত থেকে পেন পড়ে যেতে পারে।
যারাযারা বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি হাতের সূক্ষ্ম কাজকর্ম করেন তাদের কাজের উপর ব্যাঘাত ঘটে।
শেষের দিকে ধীরে ধীরে হাতের মাংস পেশী গুলো শুকিয়ে যায় এবং ওই হাত দিয়ে কোন সাধারণ কাজকর্ম করা সম্ভব হয় না।
ডাক্তারবাবুরা কারপাল টানেল সিন্ড্রোমের ডায়াগনোসিস সাধারণত রোগের উপসর্গ দেখে এবং নার্ভ কনডাক্সসন ভেলোসিটি বলে একটি টেস্ট আছে সেই টেস্ট করে জানা যায় যে কারপাল টানেল সিনড্রোম এর সমস্যা আপনার আছে কিনা।
একপর্যায়ে বেড়ে যাওয়ার পরে এর চিকিৎসা সম্পূর্ণ সার্জিক্যাল। একটি সামান্য ছোট হাতের অপারেশন করে কারপাল লিগামেন্ট রিলিজ করা যায় এবং তৎক্ষনাৎ ব্যথা ও রোগের অন্যান্য উপসর্গ গুলি কমে যেতে বাধ্য। এটি একটি পনেরো-কুড়ি মিনিটের লম্বা সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া এবং সাধারণত এটি একটি ডে-কেয়ার প্রসিডিউর। অর্থাৎ সকালবেলা ভর্তি হলে সন্ধ্যেবেলা ছাড়া পাওয়া যায়। একটি রাতও হসপিটালে থাকার প্রয়োজন নেই। অপারেশন টির সরাসরি ওপেন সার্জারি বা আর্থোস্কোপিক সার্জারি হিসেবেও করা যেতে পারে। যদি আপনার এই রোগের উপসর্গ থাকে তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারবাবুর যদি বলেন অপারেশনের প্রয়োজন আছে তাহলে দেরি করবেন না। অপারেশন করিয়ে নেওয়া আমার মতে উচিত। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এই কামনা করি।
Dr.Arunava Lala.
MS Ortho.
MCH