✍প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার
সকলেই ঋতুদার -সত্তার তিনটি পর্যায়ের কথা বলেন। প্রথম পর্যায়ে উপজীব্য মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের মনস্তাত্ত্বিক যাত্রাপথ। এরপর মূলত বলিউড স্টারদের নিয়ে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ছবি। অন্তিম পর্যায়টি উৎসর্গীকৃত হয়েছে যৌনতার ত্রিধারার (সমকামী, বিপরীতকামী ও উভকামী) উদ্দেশে। কিন্তু ‘আবহমান’ ছবিটি রিলিজের কয়েক দিন আগে কলকাতার রিলায়েন্স হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঋতুদা একটি চতুর্থ পর্যায়ের সূচনার কথা নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর অকালমৃত্যুতে সেই বীজ আর মহীরুহ হওয়ার সুযোগ পায়নি। ওই প্রেস কনফারেন্সে ঋতুদা মূলত নিজের দুটি ভাবনাকে আমাদের সামনে মেলে ধরেছিলেন। এক, পরিচালক লেখকের কেরানিগিরি করলে সিনেমা কোনও দিনও শিল্প হবে না। তাই মূল সাহিত্যকে ভাঙতেই হবে। দুই, প্রথমে অতীত, তারপর বর্তমান, সবশেষে ভবিষ্যৎ — চলচ্চিত্রে এভাবে সময়ের একমাত্রিক বিন্যাসের দিন শেষ। আবহমানের সব দর্শকই জানেন, তিনটি স্তরে বিন্যস্ত এ’ছবির আখ্যান। অনিকেতের মরণোত্তর বর্তমান বাস্তবতা, ফ্ল্যাশব্যাকে অনিকেত-শিখার সম্পর্ক ঘিরে পারিবারিক অভিঘাত এবং অনিকেত পরিচালিত ছবি ‘নটী বিনোদিনী’ থেকে দশটি দৃশ্য। এই বিন্যাসের ক্ষেত্রে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে সম্পূর্ণভাবে ঘেঁটে ও মিশিয়ে দিয়ে দর্শকের জন্য একটি puzzle game উপস্থিত করা হয়েছে। দর্শককে মাথা ঘামিয়ে বুঝে নিতে হয়েছে, কোন দৃশ্যটি কোন কালের। এই প্রসঙ্গে ঋতুদা সেদিন আমাদের কাছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দূর উদাস’ গল্পটির উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে কাহিনি ক্রমশ বর্তমান থেকে অতীতের অভিমুখে পিছিয়েছে। ঋতুদার এই দর্শনকে অবলম্বন করে তাঁর কেরিয়ারের চতুর্থ পর্যায়টি কীভাবে বিকশিত হতো, সেটা আর জানা হলো না। ‘আবহমান’ ছবিতে অনিকেত চরিত্রটির প্রেম, সৃষ্টি, উপলব্ধি সবকিছুই ভীষণ শীতল, কৃত্রিম ও ভীতু। নিজের সমালোচনায় এই ভালো না লাগাটুকুরও উল্লেখ করেছিলাম। তখন যে কাগজে লিখতাম, তার অন্য একটি বিভাগের সম্পাদক ছিলেন ঋতুদা। আমার বিভাগীয় সম্পাদিকার কাছেই জেনেছিলাম, আমার সমালোচনায় উনি ক্ষুণ্ণ হননি। তারপরও বেশ কয়েকবার দেখা ও কথা হয়েছে।