আনন্দ সংবাদ লাইভ :পুরুষদের একটু বয়স বাড়লেই যে অঙ্গ আয়তনে বেড়ে উৎপাত শুরু করে, তা হল প্রস্টেট গ্রন্থি। শুধু আয়তনে বাড়লেও না হয় কথা ছিল, তার চেয়ে যা বিপজ্জনক, তা হল প্রস্টেট ক্যান্সার। তবে সুখের কথা, এ সম্পর্কে সচেতনতা বিপদের মাত্রা শুধু কমায় না, বিপদ থেকে বাঁচাতেও পারে। সেই কারণেই সেপ্টেম্বর মাসটিকে ‘জাতীয় প্রস্টেট ক্যান্সার সচেতনতা মাস’ হিসাবে পালিত হয়। এর মাধ্যমে শুধু প্রবীণদেরই নয়, তাঁদের পরিবারকেও সচেতন করে তোলা হয়। এই সচেতনতা মাসের লক্ষ্য প্রস্টেটের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবহিত করাই নয়, এর ক্যান্সারের প্রভাব, ঝুঁকি এবং লক্ষণ নিয়েও সচেতন করা।
প্রস্টেট গ্রন্থি মাপে অনেকটা আখরোটের মতো। থাকে মূত্রথলির পিছনে। ক্যান্সার শুধু প্রস্টেট গ্রন্থিতেই নয়, শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সারা বিশ্বেই প্রস্টেট ক্যান্সারের বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার এক–তৃতীয়াংশই প্রস্টেট ক্যান্সারে। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ২৬ হাজার নতুন আক্রান্ত ধরা পড়েন, মারা যান ১৭ হাজার।
Dr. Abhay Kumar, Consultant Uro-Oncologist, Narayana Super Speciality Hospital, Howrah মতে, ‘প্রস্টেট ক্যান্সারে গ্রন্থির সাধারণ কোষের গঠন বদলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে বাড়তে টিউমার তৈরি করে। ঘটনাক্রমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই ক্যান্সার ধীরে ধীরে বাড়ায় ছোট মাপের টিউমার তৈরি হয়, ফলে তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিও কম হয়। এমনকি ক্যান্সার শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়লেও তা নিয়ে অনেকদিন থাকা যায়। এমনকি অনেকটা বেড়ে গেলেও অনেকে অনেক বছর সুস্বাস্থ্য ও ভালো মানের জীবন কাটিয়ে দেন।’
এটা খেয়াল রাখবেন, প্রাথমিক স্তরে প্রায়শই প্রস্টেট ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
প্রস্টেট ক্যান্সারে যে সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তা হল:
• তলপেটের নীচের দিকে অল্প অল্প ব্যথা
• বারবার মূত্রত্যাগ
• প্রস্রাব করতে অসুবিধে, যন্ত্রণা, জ্বালা বা প্রস্রাবের বেগ কম
• প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত (হিমাটুরিয়া)
• পিঠের নীচের দিকে, কোমরে এবং ঊরুর উপরের দিকে যন্ত্রণা
• খিদে চলে যাওয়া
• ওজন কমে যাওয়া
• হাড়ের যন্ত্রণা
ক্যান্সার যখন প্রস্টেটেই সীমাবদ্ধ থাকে, এটাকে স্থানীয় বলে ধরা হয় এবং এটির নিরাময় হতে পারে।
হাড়ে বা প্রস্টেটের আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে পেন মেডিকেশনস, বিসফসফোনেট্স, হরমোন থেরাপি, কেমো থেরাপি, রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল্স, ইমিউনোথেরাপি, নির্দিষ্ট রেডিয়েশন ও অন্য টার্গেট থেরাপি করা যেতে পারে। চিকিৎসার সুফল পাওয়া নির্ভর করে বয়স, স্বাস্থ্যসমস্যা এবং ক্যান্সার কোন পর্যায়ে, কতটা ছড়িয়েছে তার ওপর।
অনেকগুলো সমস্যা আছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যেমন, বয়স, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি। যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার মধ্যে আছে খাওয়াদাওয়া, স্থূলতা, ধূমপান, রাসায়নিকের সংস্পর্শ এবং যৌন সম্পর্কজনিত সংক্রমণ।
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে জীবনযাত্রায় বদল ঘটালে ক্যান্সারবৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো যায়।
বয়স যাই হোক, সব পুরুষের প্রস্টেট–স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। যদিও সাধারণভাবে বয়স চল্লিশের ওপরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রস্টেট ক্যান্সার তেমনভাবে প্রভাব ফেলে না। তবুও এখুনি প্রস্টেট সমস্যা ঠেকানো এবং স্বাস্থ্য–সহায়তা শুরু করে ফেলতে হবে।
সুতরাং, ঝুঁকির ব্যাপারে সচেতন হোন এবং উপরে–বলা লক্ষণগুলো ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।