✍️সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় (সঙ্গীতশিল্পী)
প্রত্যেকটি বাঙালির জীবনে প্রথম প্রেমের অনুভূতির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই গানের অবদান অনস্বীকার্য বলে আমি মনে করি।
কিন্তু আজ বলব অন্য এক নস্টালজিয়ার কথা। এক অন্যরকম অনুভুতির কথা।
ছোটবেলায় যে দিন গুলোয় দুপুর অথবা রাতে ঘুম না আসায় দুষ্টুমির পরিমাণ সীমা ছাড়াতো,
তখন স্নেহভরা দুটি হাতে কাছে টেনে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে মা যে গানের ডালি স্নেহের কন্ঠে গাইতো, তাঁরই মধ্যে একটি বিশেষ গান, ছোটবেলার সেই দিন গুলোর এক অদ্ভুত রঙীন ক্যানভাস্ তৈরি করে রেখেছে মনের অন্তরালে আজও। সেই গানের কন্ঠশিল্পীর কথাই বলব বলে কলম ধরেছি আজ হাতে।
“ও তোতা পাখি রে,
শিকল খুলে উড়িয়ে দেব,
মা কে যদি এনে দাও,
আমার মা কে যদি এনে দাও।”
এই কালজয়ী গানের লেখক ও সুরকার মাননীয় প্রবীর মজুমদার হলেও, যাঁর তুলনাহীন কন্ঠে এই গানটি প্রাণ পেয়েছে, তিনিই সেই কিংবদন্তি শিল্পী শ্রদ্ধেয়া নির্মলা মিশ্র।
যদিও এ কথা আপামর বাঙালির অজানা নয় যে এই কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী আজ আমাদের মধ্যে নেই, এই দুঃসংবাদটা যদিও বেশকিছুদিন আগের।
যেদিন এই শোকসংবাদ কানে এসেছিল, সেদিন, বেশ কিছুক্ষণ আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম রাস্তাতে কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও।
সেই সময়ে সত্যিই আমি কিছু লিখে উঠতে পারি নি। আজ মহালয়ার শুভক্ষণে শারদীয়ায় পূর্ব প্রকাশিত অন্তর মুগ্ধ করা বাংলা গানের স্মৃতিচারণের অবকাশে ভেতরে ভেতরে কি যেন এক বলতে না পারার অনুভূতি থেকে এই কথা গুলো লিখছি।
তাঁর কন্ঠের আরও একটি গান “আমি তো তোমার চিরদিনের, হাসি কান্নার সাথী” এর ঘটনা এক মৌলিক বাস্তব ঘটনার এক নাটকীয় রূপ। সে কথা না হয় অন্য কোনদিন সবিস্তারে বলব।
এমন করেই তাঁর প্রত্যেকটি গান যেন বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক একটা মাইলষ্টোনের মতো হয়ে আছে সঙ্গীতপ্রেমীদের অন্তরে। বাংলা গানের পাশাপাশি তাঁর গাওয়া ওড়িয়া গান আজও ওড়িয়া শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ স্থান দখল করে রয়েছে।
লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ী, কে কে এবং ভুপিন্দর সিং এর মতো, আমরা সঙ্গীতপ্রেমীরা আরও এক অপূরণীয় এবং কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পীকে হারালাম, যাঁর শূন্যস্থান কোনদিনই পূর্ণ হওয়ার নয়।
আমি সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, আমার কলমে এই প্রণম্য শিল্পীর প্রতি সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালাম আমার ভাষায়, আমার কলমে:-
ঝিনুক খুঁজে পেলাম যখন,
হারিয়ে গেল মুক্তখানি,
চিরদিনের কথা দিয়েও,
আঁকলে দুখের চিত্রখানি।
আয়নারও তো হিংসে ছিল,
তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে,
ওমন মিষ্টি কন্ঠ যে আর,
পাই না খুঁজে হন্যে হয়ে।
মায়ের খোঁজে কান্না তোমার,
আজও কাঁদায় আমার এ মন,
আজও আবার ভিজলো এ চোখ,
শিল্পী তোমার বিদায় যখন।
যেখানেই থাকো ভালো থেকো হে মহান শিল্পী।