Close

জীবনকৃতি পুরস্কার পেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা মোহন আগাসে, ছয় দিনের উৎসবে চাঁদের হাট ইন্টারন্যাশনাল কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

ইন্টারন্যাশনাল কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (IKSFF)এ বছর চার বছরে পা দিল। এই চার বছরেই কলেবরে অনেকটা বড় হয়েছে এই উৎসব। তাই এ বছর তাদের ট্যাগ লাইন “ছোট ছবির বড় উৎসব”। ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি এই ছয়দিন ধরে চলল এবারের ইন্টারন্যাশনাল কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।  


প্রায় ৩০টি দেশের ছোট ছবি দেখানো হয়েছে এবারের উৎসবে। সারা পৃথিবী থেকে মোট ২৭০টা ছবি জমা পড়েছিল। আমেরিকা, পোল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, বাংলাদেশ, মিশর,চেক, নেপাল, ভুটান প্রায় বিশ্বের সব দেশ থেকেই সেরা সেরা ছোট ছবির মনোনয়ন জমা পড়েছিল। এদের মধ্যে ৮০ টি ছবি মনোনীত হয়েছে। এই ৮০ টি ছবিই দেখানো হয়েছে ছয় দিনের উৎসবে। ২৩-২৫ জানুয়ারি অনলাইনে এবং ২৬-২৮ জানুয়ারি রোটারি সদনে বিশ্বের সেরা সেরা ছোট ছবিগুলি দেখানো হয়েছে। এবারের উৎসবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি ছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুধাজিৎ বসুর “নেহেমিচ”, ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারে দেখানো হয়। ‘দ্য টু ওয়ে স্ট্রিট’,এই ছবিটি ভারতীয় ছবি হিসাবে অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছে। শ্যাম বেনেগেলের প্রযোজনা সংস্থা থেকে তৈরি হওয়া ছবি সতীশ শর্মার ‘ইয়ান’। সঞ্জয় মিশ্র অভিনীত মনীশ সাইনির ‘গিধ’ ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। মোহন আগাসে অভিনীত ‘মাই ফাদার ইজ অফ্রেড অফ ওয়াটার’ উল্লেখযোগ্য।বাংলা ছবির মধ্যে রয়েছে অনির্বান ভট্টাচার্য অভিনীত বৌদ্ধয়ন মুখোপাধ্যায়ের “২৫১”।চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে নিয়ে পারমিতা মুন্সির ‘দ্য লাস্ট ট্রাম’, মুনমুন সেন এবং সব্যসাচী চক্রবর্তী অভিনীত ‘ক্যাবেচ’ দেখার সুযোগ মিলেছে।এছাড়া ট্রাইবাল ছবি ‘পাপায়া’, ‘দ্য রোড’ও ছিল উৎসবের ছবির তালিকায়। গোটা উৎসবের প্রোগ্রামিং-এর দায়িত্ব সামলেছেন অঙ্কিত বাগচী।

ছবি দেখানো ছাড়াও এবারের উৎসবে ছিল সেমিনার, মাস্টার ক্লাস। ‘সিনেমা উইথ এ কস’ নিয়ে ছিল আলোচনা। হিউম্যান রাইটস, এলজিবিটির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছিল আলোচনায়। উৎসবের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, “ছোট ছবিই এখন ভবিষ্যৎ। দিন দিন ছোট ছবির চাহিদা বাড়ছে। এই ফেস্টিভ্যাল নতুন নতুন পরিচালকদের সাহস যোগাবে, উৎসাহ দেবে বলে আমার বিশ্বাস। এবার থেকে মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় ছোট ছবি দেখানো উচিত বলে আমার মনে হয়। একটা ইন্ডাস্ট্রির চৌকাঠ হল এই ছোট ছবি। আমাদের এই ছোট ছবির বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ”।  

২৮ জানুয়ারি ছিল উৎসবের শেষ দিন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বসেছিল চাঁদের হাট। মুনমুন সেন, মোহন আগাসে, জয়া শীল, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়ের মত গুণী শিল্পীরা এসেছিলেন। ছিল ঢালাও আয়োজন। প্রায় ৩৫টির বেশি পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। প্রতি বছরের মত এবারেও জীবনকৃতি পুরস্কার এবং জীবনগুহ মেমোরিয়াল পুরস্কার ছিল। এবারে জীবনকৃতি পুরস্কার পেলেন বিশিষ্ট বর্ষীয়ান অভিনেতা মোহন আগাসে। পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “আমার যা বয়স, এই বয়সে আমার যাঁরা বন্ধুবান্ধব আছেন এই অভিনয় জগতে,সবাই এই পুরস্কার পেতে পারেন।কিন্তু এই বছরটা আমার, তাই আমি পাচ্ছি। খুবই ভাল লাগছে।” ছবি কীভাবে দেখতে হবে সেটার ওপর তিনি জোর দেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আলো করে ছিলেন মুনমুন সেন। ওঁর ‘ক্যাবেজ’ ছবিটি শেষ দিন দেখানো হয়। মুনমুন বলেন, “ভাল কোনও চরিত্র পেলে অভিনয় করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু তেমন কেউ ভাল স্ক্রিপ্ট নিয়ে আমার কাছে আসে না।”

এ বছর সেরা ছোট ছবি হয়েছে ‘গিধ’। সেরা ভারতীয় ছোট ছবি ‘নেহেমিচ’ এবং সেরা বাংলা ছোট ছবির পুরস্কার পেল ‘২৫১’। সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন অস্মিত পাথারে ওঁর ‘টু ওয়ে স্ট্রিট’ ছবির জন্য। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন ‘২৫১’ ছবির জন্য অনির্বান ভট্টাচার্য। জুরিদের চোখে সেরা ছবি হয়েছে ফ্রান্সের “ওয়ার এন্ড পিস’। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন যুগ্মভাবে সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং মুনমুন সেন। এছাড়াও এবারে সংযুক্ত হয়েছে ‘ক্লিক’ ওটিটি সেরা পুরস্কার।

শেষ দিন বাংলা সিনেমা জগতের নামী-গুণী শিল্পীরা উপস্হিত ছিলেন।উৎসবের ডিরেক্টর শাশ্বতী গুহ চক্রবর্তীর কথায়, ” মাত্র চার বছরে আমরা অনেকটাই করেছি, এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে। সবার থেকে দারুন সাড়া পাচ্ছি, এই ভালবাসা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।”

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top