নিজস্ব প্রতিবেদক:দেখতে দেখতে এগারো বছরে পা দিল স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল। দেশের অন্যতম সেরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উৎসব বলে সারা দেশেই সমাদৃত এখন স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল। দেশের তাবড় তাবড় পন্ডিত-ওস্তাদরা এই উৎসবে যোগদান করেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৫,১৬,১৭ ডিসেম্বর এই তিন দিন ধরে প্রতি বছরের মত নজরুল মঞ্চে বসেছিল এই উৎসবের আসর।
![](https://i0.wp.com/anandosangbadlive.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231218-WA0040.jpg?resize=1024%2C1024&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/anandosangbadlive.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231218-WA0023.jpg?resize=1024%2C1024&ssl=1)
দীর্ঘ এগারো বছর ধরে দেশের অন্যতম সরোদ বাদক পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পরিবার বিদুষী মানসী মজুমদার এবং পুত্র ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে আসছেন। দায়িত্বে আছে শ্রী রঞ্জনী ফাউন্ডেশন। পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ন তাঁর গুরু স্বর সম্রাট ওস্তাদ আলি আকবর খানের নামেই এই উৎসব করে আসছেন। বলা যেতে পারে এই উৎসব শিষ্যের গুরুদক্ষিনা। দীর্ঘ এগারো বছরে স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল আয়োজনে এবং ব্যাপ্তিতে অনেক বড় হয়েছে। দেশের অন্যতম সেরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উৎসব বলে পরিচিত এই ফেস্টিভ্যাল। তেজেন্দ্রনারায়ণের কথায়, “এই ফেস্টিভ্যালের পিলার আমার পরিবার এবং দর্শকের ভালবাসা। এই ফেস্টিভ্যালের মধ্যে দিয়ে আমার গুরুর প্রতি আমার শ্ৰদ্ধার্ঘ, গুরুর প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধা যেন আরও বাড়ে, তার চেষ্টা। আরও বড় স্টেজে, আরও বড় আকারে এই ফেস্টিভ্যালকে যেন নিয়ে যেতে পারি, তাই আপনাদের কাছে আশীর্বাদ কাম্য।”
![](https://i0.wp.com/anandosangbadlive.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231218-WA0025.jpg?resize=1024%2C1024&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/anandosangbadlive.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231218-WA0030.jpg?resize=1024%2C1024&ssl=1)
এ বছর স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে শিল্পীদের তালিকা ছিল চোখ ধাঁধানোর মত। দেশের তাবড় তাবড় শিল্পীরা এসেছিলেন অনুষ্ঠান করতে। এই প্রথম কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এলেন দেশের অন্যতম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাহুল দেশপান্ডে। মাওড়া বন্দিস দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন। শেষ করলেন ভজন দিয়ে। প্রায় দেড় ঘন্টা কলকাতা বুঁদ হয়ে রইল রাহুলের গায়কীতে। পরের বছর আবার ওনাকে নিয়ে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন তেজেন্দ্রনারায়ণ। প্রথম দিনে তবলা বাদক পন্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের একক তবলার অনুষ্ঠান ছিল অনবদ্য। ওঁর গুরু পন্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের তৈরি করা বহু সুর-তাল-লয় তবলার বোলে শোনালেন। উনি জানালেন পন্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের তৈরি করা রাগ-রাগিনীকেই পন্ডিত রবি শঙ্কর ‘কলকাতা ঘরানা’ নামে অভিহিত করে গিয়েছেন। প্রথম দিনে বিদুষী এন রাজম এবং বিদুষী সঙ্গীতা শঙ্করের ভায়োলিন যুগলবন্দি ছিল মনে রাখার মত। তবলায় সঙ্গত করছিলেন মায়েস্ত্র কুমার বোস। দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ওস্তাদ শাহিদ পারভেজের সেতার বাদন। কলকাতার শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর বাজনা শুনেছে। এই বছর জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী সঙ্গীতাচার্য অমিয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আঙিনায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। জীবনকৃতি পুরস্কার গ্রহণ করার পর তাঁর অনুষ্ঠান ছিল দ্বিতীয় দিনের সেরা প্রাপ্তি। তিনি বলেন, “আমার জন্য যে এত কিছু আয়োজন করা হয়েছে, তাতেই আমি কৃতজ্ঞ।” এই বয়সেও তাঁর গায়কীতে মজে রইলেন শ্রোতারা। এই উৎসবের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।
![](https://i0.wp.com/anandosangbadlive.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231218-WA0029.jpg?resize=1024%2C1024&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/anandosangbadlive.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG-20231218-WA0036.jpg?resize=1024%2C1024&ssl=1)
সরোদ বাদক পন্ডিত দেবজ্যোতি বোস এবং তবলা মায়েস্ত্র পন্ডিত স্বপন চৌধুরীর যুগলবন্দিও দ্বিতীয় দিনে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। সেই দিন পন্ডিত কুমার বসের আত্মজীবনী ‘তবলাওয়ালা’-র প্রচ্ছদ উন্মোচিত হয়। শেষদিনের মূল আকর্ষণ বলাই বাহুল্য স্বয়ং জাকির হোসেন। তবলার ঈশ্বর। নজরুল মঞ্চ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে এই নিয়ে দশ বছর ধরে বাজিয়ে চলেছেন জাকির হোসেন। এবারেও তিনি বাজালেন এবং জয় করে নিলেন কলকাতার হৃদয়। “শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এমন সমঝদার দর্শক কলকাতার মত আর কোথাও নেই”,বললেন জাকির। রাগ যোগ দিয়ে শুরু করলেন। শেষ করলেন মহাদেবের ডমরু এবং শঙ্খের ধ্বনি শুনিয়ে। গোটা নজরুল মন্ঞ্চ তখন কানায় কানায় ভরা। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে দর্শক। শীতের আমেজ কাটিয়ে তখন কেবল জাকির-উষ্ণতা।