Close

ইয়াস ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গোসবায় পৌঁছে গেল সেন্ট পলস স্কুলের প্রাক্তনী (১৯৮০) ব্যাচ

গোপাল দেবনাথ : ৮ জুন ২০২১। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারীর প্রকোপ সেই সাথে লকডাউন, বেকারত্ব স্বজন হারানোর কান্না, মৃত্যু হাহাকার। এই বিশ্বের সাথে সাথে আমরা ভারতবাসী ও বঙ্গবাসী একই সমস্যার শিকার। তার মধ্যে বঙ্গবাসী চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্তঘূর্ণিঝড় আম ফানের প্রকোপে। সেই সাথে তছনছ হয়ে গেছে বহু জেলা। শহর কলকাতা ও চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম ফানে। গত বছরের আম ফানের ক্ষত আজও শুকিয়ে যায়নি। তার মধ্যে নতুন করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সুপার সাইক্লোন ইয়াস এর তান্ডবে সমুদ্র উপকূলীবর্তী জেলা গুলো চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দরিদ্র নিপীড়িত মানুষগুলো চূড়ান্ত ভাবে অসহায় অবস্থায় আছে।

সরকারের সাথে সাথে বহু সংস্থাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই সব নিপীড়িত মানুষের জন্য। এই প্রসঙ্গে সেন্ট পলস স্কুলের প্রাক্তনী ১৯৮০ ব্যাচ এর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়।


এই নানান ধরণের দুর্যোগ প্রাক্তনীদের এক ছাদের তলায় নিয়ে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তনীদের পক্ষে উমাপতি দত্ত বলেন, আর যাই হোক আমাদের অর্থাৎ সেন্ট পলস স্কুল, আমহার্স্ট স্ট্রিট প্রাক্তনী (১৯৮০) দের বেশ কাছে এনে দিয়েছে প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে। কিছু নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন দান প্রকল্প দিয়ে শুরু আমাদের কর্মকান্ড। করোনার প্রকোপে বিপর্যস্ত জীবনযাত্রার বর্ষপূর্তি হয়ে গেল। ভালোমন্দ মিশিয়ে কেটে গেল গোটা একটা বছর। আমরা অনেকেই গত এক বছর এ হারিয়েছি অনেক প্রিয় জনকে। অনেকটাই বদলে গেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন কিন্তু তবুও থামেনি আমাদের এই পথ চলা। গতিতে অদল বদল হলেও, আমরা অদম্য। চরৈবেতি মন্ত্রে আমরা দীক্ষিত। করোনার প্রভাবে অনেক কিছু খারাপ হলেও, আমাদের জীবনে ভালো কিছুও একটা হয়েছে বলা যেতে পারে। আমরা সেন্ট পলস স্কুলের ১৯৮০ ব্যাচের ছাত্ররা আবার সমবেত হয়েছি দীর্ঘ চল্লিশ বছর বাদে। শুধু সমবেত হওয়াই নয়, আমরা ইতিমধ্যেই রূপায়িত করেছি অনেক গুলো প্রকল্প।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে : –
১. গতবছর লকডাউনের সময় দু দিন ধরে প্রায় ৪০০ জন নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া হয়েছিল।
২. আমফানের ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছিল সাগরদ্বীপে এবং রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে প্রকৃত বিপর্যস্ত মানুষগুলোর মাথায় ছাদের ব্যবস্থা করার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল।
৩. দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রায় একশো শাড়ির ব্যবস্থা করা দুঃস্থ মায়েদের জন্য (সাগর দ্বীপে) ।
৪. ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ২০০ তম জন্মবার্ষিকী মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়েছিল মিলন সমিতি (হৃষিকেশ পার্কের) সহযোগিতায় এবং সেই উপলক্ষে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।
৫. তারাপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ মহামণ্ডলের মাধ্যমে ২০০ টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছিল শীতকালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে।
৬. সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিরাট শোভাযাত্রা সহ  দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল মিলন সমিতির সহযোগিতায়।
৭. সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কামট (হাঙর) এর কামড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে  স্ক্রাচ, ট্রাইপড, লাঠি সহ নানাবিধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল।
৮. মনসা দ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে সম্প্রতি প্রায় ৬০ হাজার টাকার অর্থ সংগ্রহ করে তুলে দিয়েছি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য।
৯. আমাদের এক বন্ধুর স্ত্রীকে দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে জীবন মরণ লড়াইয়ে (ডায়ালিসিস) এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে, বন্ধুকে কিছুটা আশ্বস্ত করার জন্যে আমরা আবার ঝাঁপিয়ে ছিলাম। পারিনি, বন্ধুপত্নীকে আমাদের মাঝে ধরে রাখতে।
১০.আবার করোনা অতিমারী, সেই সাথে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, সব কিছু ঝড়ে সব লন্ডভন্ড করে না দিলেও জলস্ফিতিতে মাটির বাড়িগুলো সব ধুয়ে সাফ হয়ে গেছে। সেই সাথে সংসারের মজুত খাদ্য সামগ্রী এবং বসন , বাসন সব শেষ।
ইয়াস অধ্যুষিত সুন্দরবন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অত্যধিক। গত বছর রাঙাবেলিয়া, পাখীরালয় গ্রামে, কিছু মানুষের (কামোটে আক্রান্ত) জন্য ক্রাচ এবং ওয়াকিং স্টিক  এর ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম।

কিন্তু এইবছর দুস্থ মানুষের হাতে তুলে দিয়ে আসতে পেরেছি  শাড়ি, লুঙ্গি, নাইটি সহ অন্যান্য ভোজ্য দ্রব্য।
আমরা সেন্ট পলস স্কুলের প্রাক্তনী (১৯৮০) ব্যাচ মিলে গত ৭ই জুন  গিয়েছিলাম বনলতা শিক্ষা নিকেতন, রঙাবেলিয়া, গোসাবা তে। পৌঁছে দিয়ে এলাম শাড়ি-১০০টি , লুঙ্গি-১০০টি ১০০টি গামছা, নাইটি১০০টি, মাস্ক ১০০টি। সামর্থ্য সামান্য চাহিদা প্রচুর তবু আমরা চেষ্টা করছি কিছু দুঃস্থ ও নিরন্ন মানুষের  মুখে হাসি ফুটুক।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top