ছোটো বেলায় কোথায় বেড়ে ওঠা?ছোটো বেলায় কি হতে চাইতে?
আমার জন্ম কলকাতায়। শৈশব কৈশোরে বেড়ে ওঠা উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত শহরে। শিক্ষা দিল্লী বোর্ডের অধীনে প্রথমে সুধীর মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটশনে, তারপরে সেন্ট জুডস থেকে কমার্স নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি। NSHM – কলেজ থেকে মিডিয়া সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট হলাম। সেইসময় আমাদের কলেজ মিডিয়া সায়েন্সে ইস্টার্ন ইন্ডিয়ায় সবসময় এক থেকে দুই নম্বরে থাকতো। সেই স্ট্যান্ডার্ড এখনও বহন করে চলেছে।সেইসময় আমাদের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা ছিলেন এক একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। ছোটবেলায় ভেবেছিলাম একজন ক্রিকেটার হবো। তার জন্য বারাসাতের নামকরা ক্রিকেট ট্রেনিং সেন্টারে আমার অভিভাবকেরা ভর্তি করে দিয়েছিলেন। বাহাতি ব্যাটসম্যান ছিলাম। সাথে মিডিয়াম পেস। স্কুল কলেজ থেকে আরম্ভ করে ক্লাব ক্রিকেট পর্যন্ত্য খেলেছি। সেই সুবাদেই যখন সেলিব্রেটি ক্রিকেট লীগ টালিগঞ্জের অভিনেতা, কলাকুশলীদের নিয়ে শুরু হলো, টিভিতে দেখাতে শুরু করলো, সেখানেও আমি একচান্সেই সুযোগ পেয়েছিলাম। সর্বভারতীয় স্তরের বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পী ও কলাকুশলীদের সাথে ক্রিকেট প্রতিযোগিতার জন্য সেইবারও একবারেই নির্বাচিত হয়েছিলাম। বিমানে কখনও মুম্বাই, কখনও পাঞ্জাব, চেন্নাই, গুজরাট, ত্রিপুরায় গিয়ে খেলেছি। আমরা ছিলাম সর্বভারতীয় স্তরে বনি কাপুরের দলে। ছোটবেলায় ক্রিকেটার হবো সেই স্বপ্নগুলো আজো এই সময় অন্য আর এক ডেষ্টিনিতে এসে আমাকে এখনও ছেড়ে যায় নি তার জন্য আমার সেই সব শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা সেদিন আমাকে যত্ন নিয়ে শিখিয়েছিলেন। আজ আমি অভিনয় পরিচালনা শিল্পসত্বার মধ্যে ৺দাড়িয়েও ক্রিকেটকেও ভালবাসি।
মডেলিং জগতে কিভাবে আসা?
কলকাতায়ে মিডিয়া সাইন্সন্স নিয়ে যখন পড়তে আসি তখন বহু খ্যাতোনামা ও গুণীমান শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসি। তখন থেকে আমার পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনার অনেক পরিবর্তন হয়। আমি তখন ওনাদের সান্নিধ্যে নতুন নতুন অনেক অজানা কিছু শিখতে আরম্ভ করি। তখন থেকেই এবিপি গ্রুপ, বর্তমান পত্রিকা, প্রসাদ, নবকোল্লোল, ইন্টারন্যাশনাল ফটোস্যুট এক্সিবিশন, হোর্ডিং শুট এবং টেলিভশন কমার্শিয়াল ও অন্যান্য নামকরা এজেন্সির সাথে যুক্ত হয়ে আমি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে মডেল হিসাবে অংশগ্রহণ করি। এ উপলক্ষে আমাকে কলকাতার বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে বিজ্ঞাপন আজেন্সির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করেছি। কলেজের ফাইনাল ইয়ারের সময়ে এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই একটি প্রখ্যাত টেলিপ্রযোজনার সংস্থা থেকে প্রখ্যাত পরিচালক শ্রী অনিন্দ ব্যানার্জীর পরিচালনায় ষ্টার জলসায়ে নতুন নতুন মুখ/শিল্পিদের নিয়ে তখনকার সময়ের মেঘা হিট সিরিয়াল “কেয়ার করিনা “-তে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য চরিত্রের সুবাদে প্রচুর মানুষের খুব ভালোবাসা পেয়ে ছিলাম। সেই আমার শুরু এবং তারপর থেকে জি বাংলা, কালারস্ বাংলা ও বিভিন্ন চ্যানেলে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে অভিনয় করেছি। এই সিরিয়াল থেকেই আমার চলচিত্রে কয়েকটি ছায়াছবিতে সুযোগ আসে। মুখ্য চরিত্র সহ বিভিন্ন চরিত্রে উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছি। এই সময়ে সকলের মনে আছে টেলিভিশনের পর্দায় সিনেমা এবং সিরিয়াল জগতের অভিনেতা ও কলাকুশলিদের নিয়ে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ নিয়মিত দেখানো হতো। ছোটবেলাকার ক্রিকেট প্রেম সেটা এই সময়ে খুব কাজে লেগেছিলো। কারণ অনেকের মধ্যে থেকেই আমিও এখানে নির্বাচিত হয়ে ছিলাম। তারপর থেকে এই অভিনয় ও শিল্পকলাই আমার এখনকার জীবনচর্চা।
অভিনেতা হিসেবে তোমাকে আমরা নানান সিরিয়ালে দেখেছি।হঠাৎ মাঝখানে কলকাতা থেকে ব্রেক নিয়ে মুম্বাই কি কারনে?
একসময় সিরিয়ালে দীর্ঘ্য ১৪-১৫ ঘন্টা কাজ করতে করতে ক্লান্তি ও একঘেয়েমির জন্য একটা অন্যকিছু সৃষ্টিসিল কাজের মধ্যে থাকতে ইচ্ছা করছিলো। বিশেষ করে ক্যামেরার পিছনের কাজগুলো শেখার খুব ইচ্ছা করছিলো। তাই এই অভিনয়ের জগৎ থেকে কিছু দিনের বিরতি নিয়ে আমি এক সিনেমা পরিচালকের অবজার্ভার হয়ে কাজটা দেখতে এবং শিখতে আরম্ভ করি। এই সময়ে মুম্বাইয়ের এক প্রখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা অভিমান্যূ রায়ের থেকে ডাক পাই অ্যাসিস্ট্যান্ট কাস্টিং ডাইরেক্টর হিসাবে ওনার আন্ডারে। এখানে বহুদিন কাজ করতে করতে ক্যামেরার পিছনের বিভিন্ন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। এই সময়ে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রখ্যাত ব্যক্তিত্যের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়েছিল। এই প্রোডাকশন হাউসের অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত এড-ফিল্মের মধ্যে শাহরুখ খান অভিনিতো বায়-জুস্ এড – ফিল্ম অন্যতম। এছাড়া কাজল অভিনিতো চার্মিস, আলিয়া ভাট অভিনিতো নোকিয়া, রানভীর সিং অভিনিতো সেট ওয়েট জেল, ধোনি অভিনিতো ড্রিম ইলেভেন ও আরো বিভিন্ন এড – ফিল্মে কাজ করেছি আসিটেন্ট কাস্টিং ডিরেক্টর হিসাবে। এরপর হঠাৎ করে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে মুম্বাই থেকে কলকাতা এসে রুবি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়ে। দীর্ঘ অসুস্থতার পর কলকাতার এক প্রখ্যাত টেলিপ্রযোজনা সংস্থা এক্রোপলিশ এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড আমাকে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসাবে মনোনীত করেছিলো। দীর্ঘদিন সম্মানের সাথে কাজ করে এখন আমি একটা আপকামিং OTT প্লাটফর্ম FLIXBUG -এ কনটেন্ট, প্রোগ্রামিং এবং কাস্টিং হেড হিসাবে আছি। এছাড়া ফ্রীল্যান্সিয়েও অনেক রিজিওনাল এবং ন্যাশনাল প্রজেক্টসে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছি।
অভিনয় জগতে আর ফেরার ইচ্ছা নেই?
এই চলচিত্রের এই শিল্পের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে আজ এই উপলব্ধি করছি যে, অভিনয় আমার প্যাশন। কিন্তু সর্বোপরি পরিচালনার যে বিভিন্ন ভিভাগ আমাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে সেখানে অভিনয়টাকে আরো বুঝতে সুবিধা করে দিয়েছে, যাতে অন্যদেরকে দিয়ে ভালো অভিনয় করিয়ে নিতে পারি। প্রোডাকশনের বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও কখনো কোনো ভালো চরিত্র বা অভিনয়ের সুযোগ সর্বোপরি ভালো গল্প পেলে অবশ্যই অভিনয় করতেও পারি। বিভিন্ন কাজ ও অভিনয় নিয়ে আরো বড়ো বড়ো গুনিজনের সান্নিধ্যে অনেক বেশি করে সমৃদ্ধ হতে চাই। এটাই এখন আমার নেশা এবং পেশা। এটাই এখন আমার জীবন।
আপকামিং প্রজেক্ট?
আমার সামনে অনেকগুলো ওয়েবফিল্ম, ওয়েবসারিজ ও টেলিভিশন কমার্শিয়ালের কাজ চলছে। এরমধ্যে সম্প্রতি আকাশ সরকার পরিচালিত ভ্রমর ওয়েবসিরিজ MX প্লেয়ারে মুক্তি পেতে চলেছে। এছাড়া ক্যালকাটা সিনেভার্স প্রাইভেট লিমিটেডের MP বিড়লা সিমেন্টের একটা ন্যাশনাল প্রোডাক্ট ফিল্ম মুক্তি পাবে।
তোমার অনুপ্রেরণা কে?
সত্যিকথা বলতে সিনেমা জগৎ আর তার ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্ল্ড টাকে চিনেছিলাম বাবার হাতধরে। আসলে সিনেমা জগতে কাজ করার টা বাবার থেকেই এসেছে বলতে পারেন। বাবার হাত ধরেই প্রথম ফিল্ম সেটে পা রেখেছিলাম। উনি ছিলেন ফিল্ম ডিভিশন দুরদর্শন ভবনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। ক্যামেরার পিছনের কাজ কিভাবে হয়ে সেটা ওনার সাথেই প্রথম অনুভব করেছিলাম। ওনার পরিচালিত বিভিন্ন সিনেমার মধ্যে অন্যতম ফিল্ম হলো Children in distress। যেটি ইন্টারন্যাশনাল আওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছিল এবং খুব প্রশংসিতও হয়েছিল। এছাড়া আরো বেশকিছু ডকুমেন্টরি ফিল্ম বিভিন্ন সময়ে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। বাবার শেষ স্বল্প দৈর্ঘর ফিল্ম “DAAG” নন্দনে ও টেলিভিশনে বহুবার দেখানো হয়েছিল।
ফ্যানদের কি বলবে?
আমাকে যারা ভালোবাসেন, আমাকে পছন্দ করেন আমি তাঁদের প্রত্যেককে বলতে চাই, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তার আগে আপনি নিজে কি চাইছেন আর কি পছন্দ করছেন, আপনার স্বপ্ন কি সেটা নির্দিষ্ট করুন। তারপর গভীর অনুশীলন ও প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যান, থেমে যাবেন না, সাফল্য আসবেই।