নিজস্ব প্রতিনিধি:সময়টা সত্তর দশকের গোড়ার দিকে, বয়স যখন শৈশব অথবা বাল্যকালের পথ ধরে জীবনের প্রতি গতিশীল।
তখন থেকেই ১৫ই অগাষ্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে একজন গর্বিত ভারতবাসী হিসেবে বড়দের কাছে শেখা ও শোনা সেই গানগুলোই অন্তর আত্মা জুড়ে বিচরণ করত সঙ্গে দেশভক্তির এক অদ্ভুত শিহরণ আলোরিত হত ভেতরে ভেতরে।
আজও বলতে বাধা নেই যে, তাঁর বহিঃপ্রকাশ এখনও হয়ে চলে সচেতন বা অবচেতন মনে।
“মুক্তির মন্দির সোপান তলে,
কত প্রাণ হল বলিদান,
লেখা আছে অশ্রুজলে।”
অথবা
“চল্ রে চল্ রে চল্,
উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল,”
অথবা
আরও কত এমনই গায়ে কাঁটা দেওয়া দেশাত্মবোধক গান। কথা গুলো লিখতে লিখতে এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
আর এইজন্য আলাদা করে তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে বলে দিতে হত না বা রাজনৈতিক কোন ঘোষণার প্রয়োজন হত না, যাতে নিজের মধ্যে শুধুমাত্র এই দিনেই দেশভক্তি গদগদ হয়ে ওঠে।
বলতে দ্বিধা নেই যে, কখনও কখনও সেদিনের সেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাক্ষী হওয়ার ভীষণ ইচ্ছা গুলোর কথা ভেবে সেই অনুভূতি গুলো ভিতরে ভিতরে আন্দোলিত হয় আজও।
এইভাবেই জীবনের বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে আজ যখন দেখি, “স্বাধীনতা দিবস” একটা ছুটির দিন ছাড়া আর কিছুই না বা শুধু মাত্র সকালবেলায় পাড়ার ক্লাবে বা স্কুলের মাঠে পতাকা উত্তোলন আর ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া ছাড়া বাকি সমস্ত গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা বলে কিচ্ছু নেই এবং সার্বিক স্বাধীনতা শুধু মাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর নেতাদের ঘিরে বর্তমান, তখন নিজের অন্তরে হতাশা ছাড়া আর কিছুই কাজ করে না।
দিকে দিকে যখন শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা নেতা মন্ত্রীদের কেচ্ছা, কেলেঙ্কারি, কোটি কোটি টাকার তছরুপ আর সঙ্গে সস্তা রাজনীতির ভীষণ নোংরা খেলায় মেতে ওঠা বেশকিছু সুবিধাবাদী মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যা খুশি তাই করে চলেছে সমস্ত দেশ জুড়ে, তখন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে চুপ করে বসে থাকার এক ভীষণ যন্ত্রণা অনুভব করি নিজের মধ্যে প্রতিদিন।
পাশাপাশি কিছু বলতে বা লিখতে গেলেও আত্মনিরাপত্তার অভাব বোধ করি অসম্ভব রকম।
ভাবি, হয়ত বা এই কারণেই কোন দেশদ্রোহিতার বদনাম নিয়ে জীবনের চলার পথে এক ভয়ঙ্কর অশান্তি আসতে এক মূহুর্তও দেরি নাও হতে পারে।
প্রতিদিন সকালবেলা সংবাদপত্রে বা অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে দেশের সকল সাধারণ নাগরিকের মত বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরাও শুধু এই খবরই দেখছে বর্তমান দিনগুলোতে।
আমি হতাশ যে এরপরও আমাদের আগামী প্রজন্মকে আমরা কি শিক্ষা এনে দিচ্ছি এই কলঙ্কিত কেচ্ছা ও কুৎসার কালো ইতিহাসের মধ্য দিয়ে!!!??
আবার পাশাপাশি মনে হয় সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে কিছু বলি বা লিখি।
আমি বিশ্বাস করি এত অরাজকতার মধ্যেও মানুষ আজও সততার প্রতি বিশ্বাস রাখে আর একদিন দেশের সমস্ত গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ আজকের এই সুবিধাবাদী অসৎ রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের উপেক্ষা করে দেশের জন্য তাঁদের দেশভক্তির অদম্য আন্তরিক প্রকাশ ঘটাবে।
আর এর জন্য আলাদা করে কাউকে দেশভক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।
এতকিছুর পরেও আজও আমরা জগৎ সভায় বিভিন্ন ভাবে শ্রেষ্ঠ হওয়ার অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাই প্রতিনিয়ত। সফলতাও আসে কখনও কখনও।
এই ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের শুভ মূহুর্তে আগামী প্রজন্মের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের হাত বাড়িয়ে আগামী দিনের আরও সাফল্যের প্রচেষ্টা বজায় রেখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সকল ভারতবাসী চলুন আবার নির্দ্বিধায় গেয়ে উঠি….
“ভারত আমার ভারতবর্ষ,
স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো,
তোমাতে আমরা লভিয়া জনম্,
ধন্য হয়েছি ধন্য গো …….”।
কলমে: সঙ্গীতশিল্পী সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়