নিজস্ব প্রতিনিধি:রামায়ণের এক উপেক্ষিতা নারী সূর্পণখা — যার গল্প আমরা এটুকুই জানি যে রাম ও লক্ষ্মণের প্রতি সূর্পণখা প্রেম নিবেদন ও বিবাহ প্রস্তাব দেওয়ার ফলশ্রুতিতে সেই প্রস্তাব নাকচ করে লক্ষ্মণ তার নাক কান কেটে দেয়। আর সেই অপমানের যোগ্য জবাব দিতেই প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে রাম-লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্ররোচনা দেয় তার দাদা লঙ্কার রাজা রাবণকে। আর সেই থেকেই রাম রাবণের যুদ্ধের সূত্রপাত।
আচ্ছা কে ছিল এই সূর্পণখা? কেনই-বা সে প্রেম প্রস্তাব দিতে গেছিল রাম- লক্ষ্মনকে? কী ছিল তার বংশপরিচয়? সে কি বিবাহিতা? সত্য কি রাম লক্ষ্মণের প্রতি সে আকৃষ্ট হয়েছিল? নাকি সবই মায়ার খেলা?
নাট্যকার শ্রী প্রশান্ত সেন তাঁর কাব্য “সূর্পণখা উবাচ’-এ এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। অনেক অজানা গল্প লুকিয়ে আছে এই তথ্যসমৃদ্ধ কাব্যে। যা আমাদের পড়া ও জানার বাইরে। এই ১২ পর্বের ছন্দোবদ্ধ কাব্যের নির্মাণ যেমন অসাধারণত্বের দাবি রাখে তেমনি স্বয়ং নাট্যকার প্রশান্ত সেনের সম্পাদকীয় ও নির্দেশনায় এই কাব্যনাট্যটির ষষ্ঠতম মঞ্চায়ণ হয় গত ১৭ জুলাই ২০২২ মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয়ে।
এই নাটকের লাইভ মিউজিকের ব্যবহার উল্লেখ্য। শঙ্খ-নাল-ঝাঁঝ-মন্দিরায় শ্রী তন্ময় মণ্ডল আর হারমোনিয়াম ও আবহ কণ্ঠে শ্রী জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জীর জুটি নাটকটিকে অন্য মাত্রা দান করেছে।
মঞ্চ সজ্জায় সূর্প অর্থাৎ কুলোর ওপর আঁকা রাক্ষসের মুখের ব্যবহার এবং সামগ্রিক মঞ্চ ভাবনাতে অভিনবত্বের ছোঁয়া রেখেছেন নির্দেশক। নির্দেশকের মঞ্চভাবনায় মঞ নির্মাণে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সুদান হালদার। তাঁকে যথাযোগ্য সাহায্য করেছেন রেণু দাস, অর্ণিশা সেন ও প্রত্যুষা সেন।
এই নাটকের আলোক পরিকল্পনা ও সম্পাতের দায়িত্বে থাকা শ্রী সুবল কর্মকারও প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। নাটকের পোশাক ও রূপসজ্জায় শ্রীমতী মহুয়া সরকার প্রশংসার দাবি রাখে।
এই নাটকটিতে একক চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগতা মোহনা দাস। মোহনার দাপুটে অভিনয় দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে থিয়েটারের জগতে একেবারেই নতুন। অভিনয় শেষে অভিনেত্রী বলেন, “এই নাটকের সাফল্যের সব কৃতিত্বই আমার নির্দেশক শ্রী প্রশস্ত সেনের। থিয়েটারে আমি একদমই নতুন। সূর্পণখা উবাচ এর মতো এইরকম শক্ত একটি নাটকে আমায় সুযোগ দেবার জন্য ও আমার মতো নবাগতা অভিনেত্রীর ওপর ভরসা রাখার জন্য আমার পরিচালক শ্রী প্রশান্ত সেন ও আমার আরেক পরিবার সহজিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি কৃতজ্ঞ সহজিয়ার সম্পাদিকা অর্ণিশাদির কাছেও।”
সহজিয়ার এই ভিন্নধর্মী নাটকটি থিয়েরপ্রেমী সকল দর্শকদের অবশ্যই দেখা উচিত। দর্শকরা যে এই নাটক দেখে খালি হাতে ফিরবেন না, তা হলফ করে বলাই যায়।