সলিল চৌধুরীর জন্মদিনে যে সলিলদাকে আমি দেখেছি তাঁর কথা বলতে গেলে বলবো পৃথিবীর সেরা কম্পোজারদের মধ্যে উঁনি একজন। গানের বাইরে মানুষ সলিলদা আরো ইন্টারেস্টিং ছিলেন।তিনি ছিলেন সর্ব সাধারণের বন্ধু।মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার মানুষ।মিছিলের অনেক ভিড়ের একজন মানুষ।জনসংযোগ কাকে বলে, কতোটা শিকড়ে গিয়ে,গভীরে গিয়ে মানুষের সাথে জনসংযোগ করা যায় তা সলিলদার কাছে দেখেছি।

ঠিক যেন একটা সুতো যা তাঁর আঙুল থেকে আমার আঙুলে জড়িয়ে গেছে।প্রায় গত দুবছর ধরে পৃথিবী জুড়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমরা দেখেছি,করোনার থাবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা ক্ষত ছেড়ে গেছে তার পরিমাপ করা কঠিন।এমন সময় এই যে শ্রমজীবী ক্যান্টিন হয়েছে,মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমিও এতে সামিল হয়েছি সবই সেই সুতোটা হাতে জড়িয়ে আছে বলেই।সলিলদাকে দেখেছি সব্জি বিক্রেতাদের সাথে ফলন কেমন হচ্ছে, চাষীদের খুটিনাটি জিনিসের খোঁজ রাখতেন।এই যে একদম শিকড়ের সঙ্গে যোগাযোগ তাই এরকম গান ভাবতে পাড়তেন, তৈরি করতেন।কাজের ক্ষেত্রও বহু মানুষের যোগাযোগে মিউজিক বানাতেন।কোয়ার, মিউজিশিয়ানস সব মিলিয়ে গান তৈরি হতো যাতে কত মানুষ যুক্ত হচ্ছেন সেটা ছিল দেখার, শেখার মতো। আজও আমি যে কাজ করি সেখানে চেষ্টা করি কত বেশি মানুষ নিয়ে কাজটা করা যায়।

আসলে এত বড় কম্পোজার হয়েও সেলিব্রিটি সুলভ আচরণ করেননি।সবার মধ্যে মিশে যেতে পাড়তেন।ওঁনার মুম্বাইয়ের বাড়ি ছিল মিউজিশিয়ানদের অবারিত দ্বার।কখন কোন মিউজিশিয়ান যে সলিলদার বাড়িতে চলে আসতেন উঁনি খেয়ালও করতেন না। সবার জন্য করতেন। আজ এমন কঠিন সময়ে ওঁর এই দিক গুলোর কথাই বেশি করে মনে পড়ছে।আজ আমারও জন্মদিন।জীবনে অনেক কিছুই শিখেছি।তার মধ্যে সলিলদা শিখিয়েছেন কি ভাবে সবার সাথে, একসাথে বাঁচা যায়।

এই যে নিজেকে সেলিব্রিটি ভেবে অন্যদের থেকে দূরে থেকে বাঁচার চেয়ে সবার সাথে বাঁচার যে আনন্দ সেটা সলিলদার জীবন যাপনের থেকে পাওয়া।এই সলিল চৌধুরীও সঙ্গীতশিল্পী সলিল চৌধুরীর মতোই আমার জীবন যাপনে গুরুত্বপূর্ণ।ওঁনার ইচ্ছা ছিল সুরকার কি ভাবে তৈরি করা যেতে পারে সেই বিষয়ে একটা প্রতিষ্ঠান হোক।

যেখানে মিউজিক নিয়ে, কম্পোজিশন নিয়ে যারা ভাবছেন তারা শিখতে পারবেন সেই বিষয়ে খুটিনাটি।যদিও সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ পায়নি।কিন্তু কতো মিউজিশিয়ান তিনি যে তৈরি করে গেছেন, আজও তাঁর গান থেকে শিখছে তা ভাবলে অবাক হই। আমিও গানের পাঠশালা তৈরি করেছি ওই যে বলেছিলাম সুতোয় বাঁধা পড়ে রয়েছি।