রণবীর ভট্টাচার্য
শুটিং শেষ হয়েছে অনেকদিন। পোস্ট প্রোডাকশনের ব্যাপারে জটিলতা, তারপর রিলিজের দিন নিয়েও সমস্যা কিন্তু কে জানত এটা সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনের ১২ নম্বর তথা শেষ সিনেমা হবে! করোনা ভাইরাস আর সুশান্তের চলে যাওয়া – আজ ডিজনি হটস্টারে আপামর সিনেমার ফ্যান শেষবারের মতো দুই ঘণ্টার চেয়ে একটু বেশী সময় নিয়ে দেখল সুশান্ত সিং রাজপুতকে। যারা জন গ্রিনের ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টার্স’ পড়েছেন বা সেটা অবলম্বনে তৈরি হলিউডি সিনেমা দেখেছেন, তারা এই সিনেমার বেশিরভাগ আন্দাজ করবেন। কিন্তু আবেগ, ভালোবাসা আর শূন্যতা – সত্যি সবার ‘দিল’ আজ বেচারাই যেন!
ম্যানি আর কিজি, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া দুজন। ম্যানির একটা পা বাদ দিতে হয়েছে আর কিজিকে সবসময় তার ‘পুস্পেন্দ্র’ নিয়ে ঘুরতে হয়। কিন্তু জীবনের চিত্রনাট্য এমন যে দেখা হয়ে যায় হঠাৎ ই জামশেদপুরে র রাস্তায়। কিজি বিরক্তি জীবন নিয়ে, রোজ ব্লগ লেখে আর কোন অচেনা গায়ক অভিমন্যু বীরের ‘ম্যায় তুমহারা..’ গান শোনে। কিন্তু সেই গান অসমাপ্ত। কিজি জানতে চায় অভিমন্যু কেন শেষ করল এরকম ভাবে! ম্যানির বন্ধু জেপির চোখে ক্যান্সার, পছন্দের ভোজপুরি সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে কখন যে নিজের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে, জীবন তার খেয়াল রাখে না। ক্যানসার আবার ফিরে আসে ম্যানির জীবনে কিন্তু তার মধ্যেই নতুন ভালোবাসার মোহ ভঙ্গ হয় প্যারিসে। তারপর মৃত্যুর হাতছানি আর ম্যানি চার্চে জেনে যায় তার না থাকা শোক সভায় কিজি আর জেপি কি বলবে। পর্দায় একরাশ দুঃখ নিয়ে হারিয়ে যায় সুশান্ত সিং রাজপুতের ম্যানি।
হিন্দি সিনেমা হলেও এই সিনেমা জুড়ে অনেক বাংলা কথোপকথনের সাথে বাঙালিয়ানা রয়েছে। কিজির বাবা মায়ের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় আর স্বস্তিকা মুখার্জি অনবদ্য। যেন জীবনের চেয়েও সত্যি তাদের কিজিকে নিয়ে জীবন। নবাগতা সঞ্জনা সাংঘি প্রতিটি দিন জুড়ে রয়েছেন দুঃখ, বেদনা আর একটু ভালো করে বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে। জেপির চরিত্রে সুনীল ট্যান্ডন যথাযথ। তবে এই সিনেমা বারবার দেখা যায় শুধু সুশান্তের জন্য। অভিব্যক্তি, আবেগ, স্ক্রিনের ম্যানি এই সিনেমার হৃদয়। বলিউডে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে পরিচিত মুকেশ ছাবড়ার নির্দেশনা মন্দ নয়। ভীষণ পরিচিত একটি উপন্যাস নিয়ে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা করা নেহাত সহজ নয়! আর এ আর রেহমান ছাড়া এই সিনেমার সঙ্গীত হয় না! একটা সিন, কিন্তু তার মধ্যেই নিজের অভিনয়ের ব্যাপ্তি দেখিয়েছেন অভিমন্যুর চরিত্রে সইফ আলী খান।
দিবাকর ব্যানার্জির ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ থেকে মুকেশ ছাবড়ার ‘দিল বেচারা’ – সুশান্তের সাথে স্বস্তিকা মুখার্জির অভিনয়ের একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল। সিনেমার শুরুতে সুশান্ত জানিয়েছিল যে কালই সে মহাকাশচারী হয়ে নাসা চলে যাচ্ছে! বাস্তব জীবনে সেটা আর হল না। তবে একটা কথা বোধহয় সুশান্তের ‘ম্যানি’ সত্যি ঠিক বলে গেল – “Nothing is हमेशा “