তৌসিফ হোসেন:কথায় আছে “যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে “। হ্যা, ঠিক তাই। এখন আপনাদের জানাচ্ছি খুব সাধারণ ঘরের মেয়ে, সাধারণ গৃহবধূ ও একজন সাধারণ মা আলেয়া শাহ চৌধুরীর কথা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় কালনা থানার একটি গ্রাম চৌঘুরিয়াতে জন্মগ্রহণ করে সে। বাবা গোলাম আওলিয়া শাহ স্কুলে চাকুরীরত ছিলেন। মা সম্পূর্ণ গৃহবধূ।
দুবোন একভাই এর মধ্যে সে ছিল বড়ো মেয়ে। বুলবুল তলা শিশু নিকেতন নামে এক স্থানীয় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার প্রাথমিক শিক্ষা চলার সময়ই তার বাবা বুঝতে পেরেছিলেন মেয়ে বেশ বুদ্ধিমতী। তারপরে সে বেগপুর ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয় ও মাধ্যমিক পর্যন্ত এই বিদ্যালয় থেকেই পড়াশুনা।
স্কুলে সে বরাবরই প্রথম হতো। শুধু পড়াশোনা নয়, এই সময় তার নানান সাংস্কৃতিক দিকেও প্রতিভার প্রকাশ পায়। আবৃত্তি, নাটক, বসে আঁকা, কবিতা লেখা সব গুনই স্কুলে পড়ার সময়ই প্রকাশ পায় তার। সে ছিল শিক্ষক দের অত্যান্ত প্ৰিয় ছাত্রী এবং তার স্বভাব ছিল বরাবরই মিষ্টি । বিজ্ঞান মঞ্চে নানান পরীক্ষাতে মেধার সাথে উত্তীর্ণ হতেন। মাধ্যমিকে ৮৯.৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে নিজের মেধার সাথে সাথে বেগপুর স্কুলের সুখ্যাতিও বাড়িয়েছেন। তারপরে সে আল আমীন মিশনে এডমিশন টেস্ট দেয় ও এক চান্সেই উত্তীর্ণ হয়ে যায়। মিশন এর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাহেব তার মেধা দেখে অনেক কম খরচে তাকে মিশন থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ দেন। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সময় তার বাবা মা-এর উদ্দেশ্য ছিল যাতে সে ডাক্তার হতে পারে। সেই মতোই এগোচ্ছিলো পড়াশোনা,উচ্চ মাধ্যমিক ও জয়েন্ট একসাথে দিলো কিন্ত জয়েন্টের মেডিকেলে বেশ দূরে রাঙ্ক হওয়ায় এবং আর কোচিং নেওয়াতে আগ্রহ না থাকায় বর্ধমানের M. U. C Women’s College এ জুওলজি ওনার্স নিয়ে ভর্তি হন। তারপরে Zoology তেই M. Sc করে এবং পরীক্ষা দেওয়ার পরেই বিয়ে হয়ে যায়। রবসান চৌধুরী নামের একজন কলকাতা পুলিশের সাথে বিয়ে হলে বিয়ের পরে বর্ধমান জেলা ছেড়ে সে কলকাতায় চলে আসে।
তারপরে সে কলকাতা থেকেই রেগুলার যাতায়াত করে ২বছর এর বি.এড করে বর্ধমান ইউনিভার্সিটির রাধা গোবিন্দ বি.এড কলেজ থেকে। তারপরেই তার এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়। একা হাতে সংসার ও কন্যা কে মানুষ করেছে। এই সময় তাকে তার ছোট বোন আসমীরা তার সাথে থেকে তার কন্যা কে মানুষ করতে সাহায্য করেছে। কিন্ত বাচ্ছার দুবছর হলে তার বোনের বিয়ে হয়ে যায় ও আলেয়া পুরোপুরি একা সংসার ও বাচ্ছা সামলায়।স্বামী যেহেতু পুলিশ তাই কোনদিনই সেই ভাবে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেননি। একা হাতেই পুরো সংসার ও সন্তান এর দায়িত্ব নিয়েছে সে। একাকিত্ব কিন্ত তাকে পিছু ছাড়েনি, তাই সে তার ছোট বেলার হবি আবৃত্তি, কবিতা, নাটক, আঁকা ও ক্রিয়েটিভ চিন্তা ভাবনা তে ডুবে থাকার চেষ্টা করতে লাগল। নানান মঞ্চে তিনি আবৃত্তি করেছেন যেমন রবীন্দ্র সদন, মিল্লি আল আমীন কলেজ, ভাঙর বইমেলা ইত্যাদি। তাকে দিয়ে নানান কবি তাঁদের লেখা কবিতা রেকর্ডিং করান। বেশ কিছু শ্রুতি নাটক রেকডিং করেছেন ।
সাথে সাথে তার কবিতা লেখা ও চলছে। ইতিমধ্যে সে দুটো শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন। প্রথম টি “আখেরাত” যেটির পরিচালক মুজিবর রহমান ও দ্বিতীয়টি “The Darkness” পরিচালক এনায়েত ইসলাম। ভবিষ্যতে সে চায় তার চিত্রনাট্যর উপরও যেন কোন পরিচালক কাজ করুক। তার একটি ফেসবুক পেজ ও আছে।”আলেয়ার আবৃত্তি” নামে পেজটি তে সে নতুন নতুন কবিতা, গল্প, মোটিভেশনাল স্পিচ ও শ্রুতিনাটক প্রায়ই পোষ্ট করে তার সৃজনশীল মানসিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।একধারে তিনি অত্যান্ত বুদ্ধিমতী গৃহবধূ অন্যদিকে তিনি বহুমুখী প্রতিভাধর শিল্পী। তবে তিনি বাচিক শিল্পী হিসাবেই বেশি পরিচিত। ভবিষ্যতে তিনি তার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পোঁছে যেতে চান।