গোপাল দেবনাথ : আমাদের রাজ্যে যে সকল সংস্থা কিংবদন্তি বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম মধ্য কলকাতার হৃষিকেশ পার্কের মিলন সমিতি। এই মাসের ১৩ ও ১৪ তারিখ হৃষিকেশ পার্কে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ মহা সমারোহে উদযাপন করলো। এই অনুষ্ঠান কে সার্থক ভাবে রূপায়ণ করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো সেন্টপলস স্কুল প্রাক্তনী (১৯৮০), PROচেষ্টা এবং আর্থিক সহায়তা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান শুরু হলেও সত্যজিৎ রায়ের উপর অনলাইন গল্প লেখার প্রতিযোগিতা শুরু হয় গত বছর ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে। আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও অন্যান্য রাজ্য থেকেও বহু গল্প এসেছে বলে জানালেন মিলন সমিতির সভাপতি সঞ্জিত মিত্র। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সত্যজিৎ রায়ের উপর অঙ্কন প্রতিযোগিতা দিয়ে শুরু হয় প্রায় ৬০জন অংশগ্রহণ করে এই প্রতিযোগিতায়। বিশেষভাবে সক্ষম ২২জন প্রতিযোগী এই অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সকলের নজর কাড়ে। বাড়ি থেকে আঁকা নিয়ে আসে ২৫জন ক্ষুদে শিশু। দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল সত্যজিৎ রায়ের উপর একটি অসাধারণ ক্যুইজ এর অনুষ্ঠান। ৬টি টিমে ৩জন করে প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। দ্বিতীয়দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিনে সকাল থেকে বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরী বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে। প্রথমে সত্যজিৎ রায়ের জন্মস্থানে এই মহান ব্যক্তির মর্মর মূর্তিতে সংস্থার পক্ষ থেকে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। সেই সাথে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার পক্ষথেকে বাংলা ও বাঙালির গর্ব উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ও সুকুমার রায়ের মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরী তে যে সকল সংস্থা অংশগ্রহণ করে তাদের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় নাচের দল প্রত্যুষা, ব্যাগপাইপার ব্যান্ডের দল, ভিয়ানা স্পোর্টিং ক্লাব, ক্যানেল অল্টারনেটিভ অফ মাস সোসাইটি, আমরা সবাই, হ্যাপি ক্লাব, মিলন সমিতির ক্যারাটে ও ক্রিকেট দল। সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে সুসজ্জিত ট্যাবলো ও প্ল্যাকার্ড হাতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অংশগ্রহণ করে। মহান পরিচালকের নানান সিনেমার জনপ্রিয় গানের সাথে অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করে প্রত্যুষা’ র ছাত্রীরা। রাস্তার দুইধারের জনসমাগম মানুষের নজর কাড়ে। এই প্রভাতফেরী তে বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রায় ৩০০জন অংশগ্রহন করে। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুমিত্রা মুখার্জী। এ ছাড়াও গিটারবাদনে পন্ডিত স্বপন সেন অনবদ্য। এই দুই শিল্পীর অনুষ্ঠান শ্রোতাদের ভালো লেগেছে বলে জানা গেছে। শেষ পর্বে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন অনুপ মতিলাল, লেখক উজ্জ্বল চক্রবর্তী ও চলচ্চিত্র পরিচালক অশোক বিশ্বনাথন। সবশেষে বিশ্ববরেণ্য পরিচালকের একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। মিলন সমিতির এই সাধু উদ্যোগে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তারা হলেন সংস্থার সম্পাদক উমাপতি দত্ত, সভাপতি সঞ্জিত মিত্র এবং পরিচালন সমিতির কার্যকারী সভাপতি অমিত ভট্টাচার্য। দুদিনের অনুষ্ঠান শেষ হলেও কিন্তু অনুষ্ঠানের রেশ রয়ে গেল।