আনন্দ সংবাদ লাইভ:”ভাগ্যিস সেদিন জর্জ টেলিগ্রাফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ছিল।”একথা জর্জ টেলিগ্রাফ থেকে পাশ করে যাওয়া কোনও একজন প্রা্ক্তন ছাত্র বা ছাত্রীর নয়। যে কোনও প্রাক্তনীর মনের কথা।
অভিজিৎ মৈত্রর কথাই ধরুন না। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। দু’বছর পরেই অবসর। অথচ তখনও দুই ছেলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। বড় ছেলে সবে স্নাতক হয়েছে। আর ছোট ছেলে অভিজিতের হাতে সবে মাধ্যমিক পাশ করার শংসাপত্র। আর দিনটাও এখনকার নয়। সেই ১৯৭৭।
মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাসে ভর্তি হওয়ার আগে শোভাবাজারের অভিজিৎ ভাবলেন, “এমন কিছু করতে হবে, যাতে চাকরির জন্য লোকের দরজায় দরজায় ঘুরতে না হয়। নিজের পায়ে নিজেকেই দাঁড় করাতে হবে।” কারণ, দু’বছর পর বাবা অবসর নিয়ে নিলে সংসার টানার ভারটা যে তাঁর ঘাড়েও আসবে। তাই এমন কিছু করা দরকার, যাতে দ্রুত অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।
কোনওদিকে না তাকিয়ে সেই ৭৭’এ অভিজিৎ সোজা গিয়ে ভর্তি হলেন জর্জ টেলিগ্রাফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের রেডিও ইঞ্জিনীয়ারিং কোর্সে। দেড় বছরের কোর্স করে উচ্চমাধ্যমিকের জন্য ছয় মাসের বিরতি। রেডিও ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের পর ভর্তি হলেন টিভি ইঞ্জিনীয়ারিং কোর্সে। জর্জ টেলিগ্রাফ থেকে বেরিয়েই যোগ দিলেন ডালহৌসির ‘জি রজার্স’এ। ওরা তখন ‘ফিলিপস’ কোম্পানির নথিভুক্ত ডিলার। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর অভিজিৎ চলে গেলেন সল্টলেকের আরেক বিপনীতে। সেখান থেকে পরে যোগ দিলেন ‘আপট্রন’–এ। তবে আপট্রনে যোগ দেওয়াটা খুব সহজে হয়নি অভিজিৎ বাবুর। লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছিল মৌখিক পরীক্ষাও। বলা হয়েছিল, এই দুটি পরীক্ষায় পাশের পরেই আপট্রন তাদের কোম্পানিতে নেবে অভিজিৎ মৈত্রকে। মৌখিক পরীক্ষায় জর্জ টেলিগ্রাফ ট্রেনিং ইনস্টিউট থেকে পাশ করার সার্টিফকেট দেখে খুশি হলেন পরীক্ষকরা।
এতদিন পরে সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে অভিজিৎ বাবু বলছিলেন, “জর্জে টিভি ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের ট্রেনিং থাকার জন্য লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে কোনও অসুবিধাই হল না। চাকরিটা হয়ে গেল আমার।”
এখন কলকাতার বেশ কিছু বড় হোটেলের টিভি (এল ই ডি, এল সি ডি), মাইক্রোভেন খারাপ হলেই ডাক পড়ে তাঁর। এই বয়সেও কারও অধীনে না থেকে নিজের ইচ্ছেতেই অর্থ রোজগার করে চলেছেন তিনি। আর এর জন্য অভিজিৎ মৈত্র যাবতীয় কৃতিত্ব দিতে চান জর্জ টেলিগ্রাফ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটকে। বললেন, “ভাগ্যিস সেদিন জর্জ টেলিগ্রাফে ভর্তি হয়েছিলাম। নাহলে কোথায় যে কী ভাবে জীবন কাটাতাম জানি না। আমার মতো বহু মানুষের জীবন গড়ে দিয়েছে জর্জ টেলিগ্রাফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।”