বিশেষ প্রতিনিধি : কলকাতা, ১০ জুন, ২০২১। বিশ্বকোষবিদ ও পশ্চিমবঙ্গের নিরক্ষরতা দূরীকরণ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা পার্থ সেনগুপ্ত আজ ভোর ৪টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জন্ম – ১৯৪০ সালের ১লা জুন, কলকাতায়। সারা জীবন কাটিয়েছেন আমহার্স্ট রো তে। ষাটের দশকের বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। প্রথমে স্কটিশ চার্চ কলেজ ও পরে বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। পরবর্তীতে কালান্তর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সম্পাদনা বিভাগে। কলকাতা রামমোহন লাইব্রেরীর সাথে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত ছিলেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে যুক্ত হন নিরক্ষরতা দূরীকরণ আন্দোলনের সাথে। আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি। এই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শুরু থেকেই। সাক্ষরতার আন্দোলনের একজন প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ছিলেন, পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সন্মেলনে অংশগ্রহণ করেন সাক্ষরতা আন্দোলনের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। প্রতিষ্ঠা করেন সাক্ষরতা প্রকাশন, যা সত্তর-আশির দশকে বিভিন্ন গ্রন্থের সুলভ মূল্যে প্রকাশের বিষয়ে একটি উদাহরণ হয়ে ওঠে। এরপর বিশ্বকোষ পরিষদ গঠনের কাজে সামিল হন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে সাথে নিয়ে, এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলায় ২৪ খণ্ডের বিশ্বকোষ প্রকাশনার উদ্যোগ নেয়। প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি বিষয় নিয়ে তৈরি এই বিশ্বকোষ স্বাধীন ভারতের কোনও দেশীয় ভাষায় বিশ্বকোষ প্রকাশনার নিরিখেও একটি উদাহরণ হয়ে আছে।
সত্তরের দশকে নকশালপন্থীদের উন্মত্ত আক্রমণে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মূর্তি ভাঙার পর পার্থ সেনগুপ্ত আরও কিছু বিশিষ্ট জনকে সাথে নিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে সেই উপলক্ষে প্রাপ্ত অর্থে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মূর্তিটি পুনরায় নির্মাণের ব্যবস্থা করেছিলেন। শেষ জীবনে ছিলেন বিধাননগরে ছেলের বাড়িতে। মৃত্যুকালে বয়স বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।