কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা.. চড়াই উতরাই যাত্রাপথ…
সোমনাথ লাহা: প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ। রাজনীতির চাণক্য বললেও তাঁকে ভুল বলা হবে না। ৪৩বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় বহু দপ্তরের মন্ত্রী হলেও তিনি আসলে মাস নয়, ক্লাস পলিটিশিয়ান। ২০০৯ তে এবিপি আনন্দের স্টুডিওতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেছেন যে মানুষ তাঁকে ঠিক কতখানি পছন্দ করে তা নিয়ে এখনও তাঁর মনে গভীর সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, মেধা, এমনকি সংসদে কপিবুক বাংলা ঢঙে ইংরাজিতে একদম ব্যাকারণ মেনে কথা বলা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য ঠিক যতখানি উজ্জ্বল্যমান, ততটাই সত্যি এটাও যে প্রণব মুখোপাধ্যায় বরাবর দিল্লির রাজনীতি করেছেন। পাখির চোখ তাঁর দিল্লির দিকেই ছিল। বাংলা তথা বঙ্গ রাজনীতি বা বাংলার জন্য সে অর্থে বিশেষ কিছু করেননি তিনি। তাই কংগ্রেস তাঁকে শেষ জীবনে পুরষ্কৃত করেছে রাষ্ট্রপতি নামক আলংকারিক পদে অধিষ্ঠিত করে বাণপ্রস্থে পাঠিয়ে। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তিনি যখন অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছিলেন তখন তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মনমোহন সিং কে প্রধানমন্ত্রী বানায় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। মনে মনে মুচকি হাসেন প্রণববাবু। এক কথায় প্রণববাবু হলেন প্রফেশনাল পলিটিশিয়ান। রাজনীতিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। আর সেই কাজটাই করেছেন তিনি। আর সেইজন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। এক অর্থে রাজনীতিবিদ ঠিক কেমন হওয়া উচিত সেটা পলিটিক্যাল সায়েন্সের কোনও ছাত্র যদি এ নিয়ে নিবিড় গবেষণা করতে চায় তাহলে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বাংলা থেকে এর আগেও অনেক রাজনীতিবিদ হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে.. তবে রাজনীতির ব্যালেন্সের খেলার মাপকাঠিতে সকলকে নিয়ে এই চলার যে অভিন্ন পন্থা সেই জায়গায় উপরের সারিতে থাকবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।