নিজস্ব প্রতিনিধি: বিখ্যাত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, টালা প্রত্যয় একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করেছিল দুর্গাপুজো উৎসবকে বিশ্বব্যাপী পোঁছানোর ক্ষেত্রে এর ঐতিহ্য, শিল্প, সংস্কৃতি এবং এটি মানুষের উপর যে আর্থ-সামাজিক প্রভাব সৃষ্টি করে সেই বিষয়ের ওপরে জোর দিয়ে। দুর্গাপুজোর গ্রহণযোগ্যতা এবং স্বীকৃতিকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য, টালা প্রত্যয় একটি অনন্য ধারণার পথপ্রদর্শক হিসেবে # দুর্গাপুজো গো গ্লোবাল শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা করে যেখানে জীবনের বিভিন্ন স্তরের আলোকিত ব্যক্তিরা যুক্ত হয়েছিলেন। দুর্গাপুজোর উৎসব শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, মহাদেশগুলিতে, যেখানে বাঙালিরা রয়েছে, সেখানেও অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। এই উৎসব বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের হৃদয়কে সংযুক্ত করে।
ওই প্যানেল আলোচনায় দেখা গিয়েছে, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা এক মঞ্চে একত্রিত হয়ে #দুর্গাপুজো গো গ্লোবাল-এ তাঁদের আলোকিত চিন্তাভাবনা ভাগ করে নিচ্ছেন। এতে হসপিটালিটি, কনস্যুলেট, বিনোদন এবং সরকারি স্তর, ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার অনুকরণীয় বক্তাদের বক্তব্য শোনা গিয়েছে। ওই প্যানেলে যে সমস্ত বক্তা তাঁদের বক্তব্য রাখেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিল-এর পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ডিরেক্টর ডঃ দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, বাংলা নাটক ডট কম-এর ডিরেক্টর শ্রীমতি অনন্যা ভট্টাচার্য, স্থপতি শ্রী সায়ন্তন মৈত্র, ললিত গ্রেট ইস্টার্নের জেনারেল ম্যানেজার শ্রী দিলীপ মিশ্র-দের মত বক্তারা। সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জনাব ফিরহাদ হাকিম। সন্ধ্যায় ওই অনুষ্ঠানের গ্ল্যামার যোগ করার জন্য প্যানেলিস্টদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন টলিউড অভিনেত্রী সোহিনী সরকারও। টালা প্রত্যয়-এর প্রাঙ্গনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক মুখ ডঃ কুনাল সরকার।
দুর্গাপুজো উৎসব নিজেই একটি সম্প্রদায় যা বিশ্বজুড়ে মানুষকে সংযুক্ত করে। প্যানেল আলোচনা শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী, জনাব ফিরহাদ হাকিম বলেন, উৎসবের শক্তিশালি সম্ভাবনাকে একটি গ্লোবাল ইভেন্ট করে তুলতে হবে এবং এটি কীভাবে মানুষের জন্য ব্যাপক মাত্রায় রাজস্ব আয় করতে পারে সেই বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। এই বিষয়ে তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করার জন্য পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন। আরও বেশি সংখ্যক বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যথাযথ পরিকাঠামো বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দেন তিনি।
আলোচনা সেশনের সময় ব্রিটিশ কাউন্সিলের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ডিরেক্টর ডঃ দেবাঞ্জন চক্রবর্তী বিকল্প অর্থনীতির মুখ হিসেবে দুর্গাপুজো এবং বিদেশে এর প্রভাব-এর বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। সৃজনশীল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জীবিকার উপর কীভাবে এই উৎসব একটি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলে, সে সম্পর্কে তিনি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি`র কথা তুলে ধরেন। বলেন, বংশ পরম্পরায় বহু পরিবার প্রতিবছর প্রতিমা নির্মাণ, কারুশিল্প ও নকশা, আলোকসজ্জা ইত্যাদিতে যুক্ত থাকে এবং এই উৎসব তাদের অনেকের সারা বছরের আয়ের উৎস।
বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি আন্তর্জাতিক আকর্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে, বাংলা নাটক ডট কমের ডিরেক্টর শ্রীমতি অনন্যা ভট্টাচার্য তাঁর চিন্তাভাবনা`র কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, কীভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার শিল্পী ও কারিগররা একত্রিত হয়ে সারাদিন ধরে কাজ করে চলেন, সেকথা।
পুজোতে সারা শহরে দেখা গিয়েছে ১০,০০০টি`রও বেশি বড় এবং ছোট প্যান্ডেল, যা একে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্ট্রিট-আর্ট ফেস্টিভাল বানিয়েছে। এমনকি প্যান্ডেলগুলি কলকাতা কী ভাবছে বা প্রতিবাদ করছে সেটা জানার জন্য একটি ভাল জায়গা হিসেবেও নিজেদের তুলে ধরেছে।
পুজোর সময় সারা বাংলা জুড়ে প্রচুর সংখ্যক যেসমস্ত কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই বিষয়টিকে তুলে ধরলেন একজন স্থপতি শ্রী সায়ন্তন মৈত্র। বলেন, প্রতি বছর পুজোর সময় শিল্পীরা যে আশ্চর্যজনক কাজ তৈরি করেন, সেগুলি অতুলনীয়। তিনি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই দেশীয় শিল্প বস্তুর চাহিদা`র কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন-এর জেনারেল ম্যানেজার শ্রী দিলীপ মিশ্র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। বলেন, কীভাবে এই মহৎ উৎসবকে আতিথেয়তা ও উৎসব পর্যটনে রূপান্তরিত করা যায়, সেকথা। তিনি বলেন, এই উৎসবটি বছরের সবচেয়ে বড় পর্যটন ইভেন্ট হতে প্রস্তুত। এর মাধ্যমে, আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার, মিষ্টান্ন, আতিথেয়তাকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করতে পারি যা বাংলার পুরো আতিথেয়তা-পর্যটন ক্ষেত্রটিকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এই অনুষ্ঠানে আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং অন্যান্য পুজো কমিটি`র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন যাঁরা এই অনুষ্ঠানটিকে একটি দুর্দান্ত সাফল্য এনে দেবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।