নিজস্ব প্রতিবেদক:পুরাণমতে সত্যযুগে রাজা মহারাজের রাজ্য জয়ের প্রতীকী হিসেবে অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রচলন ছিল। যার উল্লেখ রামায়ণ ও মহাভারতে আছে। শাস্ত্রে উল্লেখ হয়েছে কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ অচল। পরিবর্তে দুর্গাপুজো।
বাংলাতেও সেই রাজা মহারাজের হাত ধরে দুর্গাপুজোর চল তাই শুরু, অশ্বমেধ যজ্ঞের বিকল্প হিসেবে। কিন্তু অধিকাংশ রাজার ঘরে সাধারণ মানুষের নিমন্ত্রণ তো দূরের কথা, আমন্ত্রণ থাকত না । বরং সদর দরজায় পাহারারত লেঠেলরা রুখে দাঁড়াত। অপমানিত গ্রামের মানুষ ১৭৯০ এর এক সকালে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা শুরু করবেন যৌথ উদ্যোগে পুজো করার। ঐতিহাসিকদের অনুমান, ব্যক্তি অস্তিত্বরক্ষার কারণেই দুর্গাপুজোর সিদ্ধান্ত নেন গুপ্তিপাড়ার মানুষজন। তবে কলকাতায় সেই বারোয়ারি পুজোর চল শুরু আরও ১০০ বছর পর। কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথের আর্থিক অনটনে পুজো বন্ধ হওয়ার মুখে সাধারণ স্থানীয় মানুষ চাঁদা তুলে পুজো ধরে রাখেন। সময়টা ১৯১০। এরপর থেকে বারোয়ারি পুজোর পাশাপাশি আবাসনের বাসিন্দারাও শারদীয় পূজোয় অংশ নিতে শুরু করেন।
উত্তর কলকাতার টালা পার্ক অঞ্চলে ওম স্কাইলার্ক আবাসনের বাসিন্দারাও গত তিন বছর ধরে শারদ উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। এবার মণ্ডপের আদল গড়ে তোলা হয়েছে দিল্লির লালকেল্লার অনুকরণে। গত বছরের থিম ছিল কেদারনাথের মন্দির। এছাড়াও অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েদের আর্থিক সাহায্য এবং রামকৃষ্ণ মিশনের তহবিলে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিষ অর্পণ করা হয়। এই বছর আর জি কর ঘটনার প্রেক্ষিতে আড়ম্বর বর্জন করা হয়েছে।মহাপঞ্চমীর দুপুরে এই পুজো উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত।
প্রায় ১৫০ পরিবারের বাঙালি , অবাঙালিদের নিয়ে গড়ে ওঠা ওম স্কাইলার্ক আবাসনের আবাসিকরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন উৎসবের দিনগুলি। আয়োজন করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের মূল লক্ষ্য, সামাজিক মিলন মেলা।সেই শর্ত পূরণে এই আবাসনের মানুষ খুঁজে পান বৈচিত্র্যের মধ্যে একাত্মতা। পুজো কমিটির সম্পাদক অরুণ পাটোদিয়া। এবার পারিবারিক বিয়োগে সরাসরি উৎসবে যোগ দিতে না পারলেওআন্তরিক। কমিটির সভাপতি অসীম সাহা জানান, আবাসনে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট চিকিৎসক আছেন। সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনায় প্রত্যেকেই মানসিক ভারাক্রান্ত। তবু বছরকার মাতৃ আরাধনায় আন্তরিক। কোনো আড়ম্বর ছাড়াই এবার দেবীর আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন ওম স্কাইলার্ক আবাসনের সদস্যরা। উৎসব পরিচালনার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অন্যতম আবাসিক রাকেশ কুমার পাণ্ডে।