Close

চিরবিদায় নাট্য কিংবদন্তি মনোজ মিত্রর

✍️By Ramiz Ali Ahmed

মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র।দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার তাঁকে ভর্তি করাও হয়েছিল হাসপাতালে।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

মনোজ মিত্রের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর, বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ধুলিহর গ্রামে।শৈশব কেটেছে তাঁর ওই গ্রামেই।বাবা অশোক কুমার মিত্র স্বাধীনতা – উত্তর বাংলাদেশের ঢাকায় ভারতের দূতাবাসে চাকরি করেছেন।
১৯৫৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স-সহ স্নাতক হন তিনি। সঙ্গী হিসেবে পান বাদল সরকার,রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মতো ব্যক্তিত্বদের।ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনে এম.এ করেন তিনি।ডক্টরেটের জন্য গবেষণা শুরু করেছিলেন।

১৯৫৭ সালে কলকাতায় থিয়েটারে অভিনয় শুরু মনোজ মিত্রর। ১৯৭৯ সালে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন ।রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে বিভিন্ন কলেজে দর্শন বিষয়েও শিক্ষকতা করেন।
প্রথম নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’ লেখেন ১৯৫৯ সালে কিন্তু ১৯৭২-এ ‘চাক ভাঙা মধু’ নাটকের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি তৈরি হন। ওই নাটকটির মঞ্চ নির্দেশনা করেন বিভাস চক্রবর্তী। নাট্যগোষ্ঠী ‘সুন্দরম’ প্রতিষ্ঠাতাও মনোজ মিত্র।

১৯৮০ সালে ‘সাজানো বাগান’ নিয়ে তপন সিংহ ছবি তৈরি করলে চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোজ মিত্রের জন্ম হয়। ১৯৮৪-তে অঞ্জন চৌধুরীর ছবি শত্রুতে ‘ভিলেন’ নিশিকান্ত সাহার চরিত্রে জাত চেনান মনোজ। নিশিকান্তকে দেখে পূর্বসূরি উৎপল দত্তের কথা মনে পড়ে বাঙালির। উল্লেখ্য, একাধিক ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করেও মনোজ কখনও টাইপকাস্ট হননি। ঠিক উৎপল দত্তের মতো! ফলে ১৯৮৯-তে যখন দূরদর্শনের জন্য ধারাবাহিক তৈরি করেন পরিচালক রাজা সেন, আদর্শ হিন্দু হোটেলের সেই মানবিক হাজারি ঠাকুর চরিত্রে মানিয়ে যায় কিংবদন্তি অভিনেতাকে। আসলে সবটাই যে অভিনয় দক্ষতার উপরে নির্ভরশীল, তা নাটক থেকে সিনেমা, সিনেমা থেকে ধারাবাহিকে বারবার প্রমাণ করেন মনোজ। সেই কারণেই সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত,গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকের পাশাপাশি শক্তি সামন্ত, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তী, প্রভাত রায়, অঞ্জন চৌধুরীর মতো মূলধারার পরিচালকদের ছবিতেও চুটিয়ে কাজ করেন তিনি।অভিনয় করেছেন ৫৭টি সিনেমায়।

নাটক-সিনেমা-ধারাবাহিক এই ত্রিস্তর ডিঙিয়ে সমান্তরালভাবে চলেছে কিংবদন্তির লেখালিখি।লিখেছেন শতাধিক নাটক। ‘চাক ভাঙা মধু’র মতোই ‘সাজানো বাগানে’ ভেঙেছেন নাট্য রচনার পুরনো ধারাকে। পরবর্তীকালের রচনা ‘দম্পতি’, ‘আমি মদন বলছি’-র মধ্যেও রয়েছে সিরিও কমেডির মনোজ মিত্র টাইপ ঘরানা। নাটকের এই ধারা বাহিত হয়েছে ‘কেনারাম বেচারাম’, ‘নরক গুলজার’, ‘সাজানো বাগান’, ‘দেবী সর্পমস্তা’, ‘অলকানন্দার পুত্রকন্যা’, ‘ছায়ার প্রসাদ’, ‘নাকছাবিটা’য়…। নাট্যকার মনোজের লেখার ধারে তাঁর নাটক পাঠেও তৃপ্ত হন পাঠক।পেয়েছেন বহু পুরস্কার ।১৯৮৫সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে সঙ্গীত নাটক একাডেমি।১৯৮৩ ও ১৯৮৯ সালে পেয়েছেন সেরা নাট্যকার হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পুরষ্কার।এছাড়াও পেয়েছেন বহু পুরস্কার।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top