By Ramiz Ali Ahmed
২০২০ সাল যেন সত্যি অভিশপ্ত।তা আরেকবার মনে করিয়ে দিল জগদীপের মৃত্যুর খবর।বলিউডের সবার খুব প্রিয় অভিনেতা জগদীপ আর নেই।বলিউড এই অভিনেতার আসল নাম সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরি।তবে জগদীপ নামেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি।
তিনি মূলত কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।বলিউডে এ নামেই পরিচিত ছিলেন। বুধবার মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন জগদীপ । তিনি বলিউড অভিনেতা ও নৃত্য শিল্পী জাভেদ জাফরি ও নাভেদ জাফরির পিতা।জাভেদ নাভেদ ছাড়াও জগদীপের আরও তিন সন্তান আছে।
বুধবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে জগদীপ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। রাতে টুইট করে অভিনেতা অজয় দেবগন প্রথম খবরটি প্রকাশ করেন। অজয় দেবগন টুইট করে লিখেছেন, ‘’জগদীপ সাবের চলে যাওয়ার খবর শুনলাম।ওনাকে বড়পর্দায় দেখার আবেগটাই অন্যরকম ছিল। দর্শকের মনে দারুন খুশি এনে দিতেন তিনি। জাভেদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইলো। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
অনিল কাপুর ট্যুইটে শোকজ্ঞাপন করে লিখেছেন, “দেশের অন্যতম সেরা অভিনেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন জগদীপ সাহেব। ওনার বড় ভক্ত ছিলাম আমি। ‘এক বার কাহো’ ছবিতে তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য হয়েছিলাম। সর্বদা আমায় সমর্থন করতেন, অনুপ্রেরণা জোগাতেন। ওনার পরিবারের জন্য আমার সমবেদনা রইল।”
বলিউড পরিচালক মধুর ভান্ডারকরও টুইট করে শোকবার্তা জ্ঞাপন করে লিখেছেন ”প্রায় সত্তর বছর ধরে আমাদের হাসিয়ে আজ চোখের জলে বিদায় নিলেন অভিনেতা জগদীপ সাহেব। জাভেদ, নাভেদ ও তাঁদের পরিবারের প্রতি রইল সমবেদনা।সত্যিই দুঃখজনক।”
অভিনেতা জনি লিভার তাঁর প্রথম ছবির অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
হনসল মেহেতা লিখেছেন,”সমবেদনা জাভেদ জাফরিসহ গোটা পরিবারকে। একটা প্রশস্ত হাসি দিয়েই তাঁকে চিরকাল মনে রাখা হবে। প্রিয়দর্শনের “মুসকুরাহাট” ছবিতে অসামান্য অভিনয় করেছিলেন জগদীপ সাব। আমার সেরা লাগে তাঁর ওই ছবিটাই।”
বার্ধক্যজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে অভিনেতা জগদীপের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ জগদীপ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ‘শোলে’, ‘পুরানা মন্দির’-এর মতো একাধিক হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন জগদীপ। ৭০ ও ৮০-র দশকে অনেক ছবিতে কমেডিয়ানের চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। তাঁর ব্যতিক্রম কণ্ঠ এবং পর্দায় ভিন্ন রকমের উপিস্থিতি মুগ্ধ করেছে দর্শককে। ‘শোলে’ ছবিতে সুরমা ভুপালিকে মনে ধরেনি,এমন দর্শক বোধহয় খুঁজে পাওয়া দায়! ছবিতে তাঁর কণ্ঠে আলোচিত সংলাপ ‘মেরা নাম সুরমা ভোপালি অ্যায়সে হি নেহি হ্যায়’ এখনো দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে।
১৯৮৮ সালে ‘সুরমা ভোপালি’ নামেই একটি ছবি পরিচালনাও করেছিলেন তিনি।ছবির কাহিনিও তিনি লিখেছিলেন।ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন জগদীপ,ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন রেখা। অনেক ছবিতে মুখ্য চরিত্রেও কাজ করেছেন জগদীপ, তাঁকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে ছবির গল্প।
এক সাক্ষাৎকারে জগদীপ জানিয়েছিলেন তিনি সিনেমায় নেমেছিলেন কারণ তাঁর পয়সার প্রয়োজন ছিল।কখনও কোনও লিড রোলে অভিনয় করবেন এমন কোনও আকাঙ্খাই ছিল না।
দীর্ঘ কেরিয়ারে ৪০০-র বেশি ছবিতে কাজ করেছেন জগদীপ। এর মধ্যে ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘ব্রহ্মচারী’, ‘কুরবানি’, ‘শাহেনশাহ’,’অব দিল্লি দূর নেহি’,’হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’,‘নাগিন’-এর মতো সুপারহিট ছবিও আছে। ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ ছবিতে সলমান খানের বাবা বাঁকেলালের ভূমিকাতেও তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন।’হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’ দেখে নাকি স্বয়ং জওহরলাল নেহেরু মুগ্ধ হয়েছিলেন।১৯৫১ সালে ‘আফসানা’ নামে একটি সাদাকালো সিনেমায় শিশু চরিত্রে অভিনয় দিয়ে তিনি বলিউডে পা রাখেন জগদীপ।সাদাকালো যুগেই শিশুশিল্পী হিসেবে জগদীপকে দেখা গেছে বিমল রায়ের ‘দো বিঘা জমিন’, ‘কা আব্বাস মুন্না’ এবং গুরু দত্তর ‘আর পার’ ছবিতে।’ হিরো হিসেবেও পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।২০১২ সালে তাঁকে দেখা গিয়েছিল রুমি জাফরির ‘গলি গলি চোর হ্যায়’ ছবিতে।তাঁকে শেষ বারের মতো সিনেমায় দেখা গেছে ২০১৭ সালে আলি আব্বাস চৌধুরীর ‘মস্তি নাহি শাস্তি’ সিনেমায়।