By Ramiz Ali Ahmed
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আবার নক্ষত্র পতন। প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়। কোমরের সমস্যা থাকায় শেষ কয়েক বছর একেবারে শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল তাঁর। রবিবার সকাল ৯.৩৫ নাগাদ নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা।
১৯৩০ সালে ১ মার্চ জন্ম হয় অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়ের।সৌরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর আসল নাম।তবে খ্যাতি পেয়েছিলেন মনু নামে।বাবা অমরেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মা ছিলেন নিভাননী দেবী। অমরেন্দ্র মুখোপাধ্যায় নিজেও ক্যালকাটা থিয়েটারের সঙ্গে অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন।মনু ছোটবেলা কাটিয়েছেন কলকাতার টালা পার্কে।তাঁর পরিবার ১৯৪১ সালে চলে আসেন কলকাতার হাতিবাগানে। ভারতী স্কুলে পড়তেন । তিনি ১৯৪৬ সালে পাশ করেন ম্যাট্রিক। এরপর মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে ভরতি হন অভিনেতা। সেখান থেকেই পাশ করেন আইএ। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট থেকে অভিনয়ের প্রতি আলাদা টান অনুভব করতেন। পাড়ায় মহিলা চরিত্রে বহু নাটকেই অংশ নিয়েছেন।স্থানীয় এক ক্লাবে অভিনয় করতেন তিনি। সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ১৯৫৭ সালে প্রম্পটার হিসেবে শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে যোগ দেন। বর্তমানে যা বিশ্বরূপা থিয়েটার বলে পরিচিত।
ছয়ের দশকে সুজাতা সদন, মিনার্ভা, বিশ্বনাথ মহল, রং মহল, স্টার থিয়েটারেও কাজ করেছেন তিনি। ‘ক্ষুধা’ নাটকে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অভিনয় করেছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়।সেই সময় কালী বন্দ্যোপাধ্যায় ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’ ছবির শুটিং-এ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।সেই জায়গাতেই সুযোগ ঘটে যায় মনু মুখোপাধ্যায়ের।সেখান থেকেই অভিনয় জগতে পরিচিতি মেলে।সেই সময়েই তিনি হাইকোর্টে কেরানিকের কাজ পান।পাশাপাশি অভিনয়টাও তিনি চালিয়ে যান।
একইসঙ্গে তবলা বাদক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিল তাঁর। বিখ্যাত তবলা বাদক কৃষ্ণকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে তবলা শিখতেন তিনি।
একাধিক সিনেমা, সিরিয়াল সহ ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন মনু মুখোপাধ্যায়। ‘সুদামা দ্যা হাফ ম্যান’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। যদিও সেই ছবি মুক্তি পায়নি। তাঁর প্রথম ছবি মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’।কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই তিনি গিয়েছিলেন মৃনাল সেনের কাছে।ছবিটি ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায়।
এরপর ‘উত্তরায়ণ’,’শেষ থেকে শুরু’,’নায়িকার ভূমিকায়’,’মর্জিনা আব্দুল্লাহ’,’সোনার খাঁচা’, ‘অশনি সংকেত’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘সাহেব’, ‘গণশত্রু’,’ পাতালঘর’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘গয়নার বাক্স’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি ‘পৌষ ফাগুনের পালা’, ‘বয়েই গেল’, ‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’ সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ‘ব্যোমকেশ মাকড়সার রস’ ওয়েব সিরিজে।
সত্যজিৎ রায়, রোল্যান্ড জোফির মতো বিশ্বখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন মনু মুখোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে ‘মছলিবাবা’র চরিত্রে অভিনয় করে প্রচন্ড জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।
প্রবীন অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইট বার্তায় লিখেছেন- ‘থিয়েটার ও ফিল্ম জগতের বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকাহত। আমরা তাঁকে জীবন কৃতি সম্মানে ভূষিত করেছিলাম ২০১৫ সালে টেলি সম্মান পুরস্কারের আসরে। তাঁর পরিবার, সহকর্মী ও অনুরাগীদের প্রতি রইল আমার সমবেদনা’।