✍️By Ramiz Ali Ahmed
‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।‘
কবি সুকান্তের আঠারো বছর বয়সের জয়গান চিরকালীন। এই দুর্নিবার আঠারোর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ কবি অনুভব চট্টোপাধ্যায়। অনুভব কবি, যদিও সে এই পরিচয় দিতে চায় না কারন অনুভব জানে এই পরিচয়ে যথার্থ ভাবে পরিচিত হতে গেলে তাকে এখনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তবুও এই চলার পথেই আজ তার কবিতার উদযাপন-প্রথম কাব্য গ্রন্থের প্রকাশ অনুষ্ঠান। আঠারোর দুঃসহ স্পর্ধায় নয় নম্র বিনয়েই অনুভব এই অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানায়।
অনুভবের জন্ম বৃটেনে। তারপরেই দেশের মাটির অমোঘ টানে অনুভবকে নিয়ে তার বাবা মা স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় ও ডাঃ পলি চট্টপাধ্যায় চলে আসেন। অনুভবের পড়াশোনা কলকাতাতেই। ক্যালকাটা বয়েস স্কুল থেকে ICSE পাশ করে বর্তমানে বিজ্ঞানের ছাত্র অনুভব মেডিক্যাল এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে তার সাহিত্যের চর্চা ও পড়াশোনা। আনুভবের পরিণত লেখনী দেখে মনে হয় বাংলা সাহিত্য অদূর ভবিষ্যতে হয়ত আবার একজন সাহিত্যিক চিকিৎসক পেতে চলেছে। সাহিত্যের সঙ্গে চলচিত্রেও আনুভবের আগ্রহ। ভবিষ্যতে চিত্র পরিচালক হওয়াও অনুভবের আর এক স্বপ্ন।
আজকাল অনেক বাবামা যখন তাঁদের সন্তানের ‘বাংলাটা ঠিক আসেনা’ বলে গর্ববোধ করেন সেই সময়েই স্রোতের গিয়ে বিপরীতে চট্টোপাধ্যায় দম্পতি ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র অনুভবকে ছোট থেকে বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী করে তুলেছিলেন। শৈশব থেকেই অনুভব মা ঠাকুরমার কাছে সুকুমার রায়ের কবিতা বা ঠাকুরমার ঝুলির গল্প শুনতে ভালবাসত। তবে অনুভবের ছোট্ট জীবনের মোড় ঘোরে তের বছর বয়সে উপনয়নের সময়। এই উৎসবে সে কিছু বাংলা বই উপহার পায় ও নিজের চেষ্টায় পড়ে ফেলে। এরপরে আর থামে নি অনুভব। তের থেকে আঠারো এই পাঁচ বছরে বঙ্কিমচন্দ্র থেকে সত্যজিত রায় পর্যন্ত পড়াশোনা করে লেখালেখি শুরু করে। কবিতার পাশাপাশি অনুভব ছোট গল্পও লেখে। ইতিমধ্যেই তার গল্প ‘ম্যাজিক্যাল চকলেট’ আনন্দমেলা স্কুল সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।
ঋক থেকে প্রকাশিতপ্রেস রিলিজ ‘অনুভবের কবিতা’ সাতান্নটা কবিতার সংকলন। শুরুর দিকের কবিতাগুলিতে পূর্বসূরী কবিদের প্রভাব থাকলেও পরবর্তি কবিতাগুলিতে অনুভবের একটি নিজস্ব আঙ্গিক তৈরি হয়। ধীরে ধীরে কবি অনুভব পরিনত হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যেই ‘অনুভবের কবিতা’ প্রসংশিত হয়েছে প্রবীণ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সহ আরো অনেকেরই কাছে। বইয়ের এর মুখবন্ধে শীর্ষেন্দু লিখেছেন ‘… কবিতাগুলি কোন আনাড়ি হাতের মক্সো বলে মনে করার কোন কারণ নেই, রীতিমত এক বৈদগ্ধজারিত, অনুভূতিশীল পংক্তি নিচয়।……’
অক্সফোর্ড বুকস্টোর্সে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে অনুভবের দাদু প্রবীণ চিকিৎসক ও সঙ্গীত শিল্পী ডাঃ ভাস্করমণি চট্টোপাধ্যায় বইটির উদ্বোধন করেন। ডাঃ ভাস্করমণির উদ্বোধনী সঙ্গীত, আবৃত্তিকার শোভনসুন্দর বসু ও অদিতি বসুরায়ের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। প্রখ্যাত অভিনেত্রী মৌবণি সরকার সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করেন।