গোপাল দেবনাথ : কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে শিশুদের স্বর্গ বিধান শিশু উদ্যান গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শিশু কিশোরদের প্রবেশ নিষেধ জয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর জন্য। শিশুরা তাদের নিজস্ব উদ্যানে প্রবেশ করতে চাইলেও সরকারি বিধি নিষেধের জন্য প্রবেশ করতে পারছে না। এই স্বর্গদ্যানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রয়াত জননেতা অতুল্য ঘোষ। বিধান শিশু উদ্যানে প্রতি বছর মহা ধুমধাম সহকারে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে সদস্যরাই। হাজার হাজার শিশু কিশোরদের হৈ হুল্লোড়ে জমজমাট থাকে তাদের প্রিয় উদ্যান। এই বছর টা অন্যান্য বছর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করোনার অতিমারীর জন্য পূজা মণ্ডপে সকলের প্রবেশ নিষেধ হয়ে গেছে। এই শারদ উৎসব এবং দুর্গাপুজো সম্বন্ধে বিধান শিশু উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদার কে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি জানালেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বিধান শিশু উদ্যানে আমরা এই উৎসবের আয়োজন করে আসছি। এ বছরও করা হয়েছে। তবে একেবারেই তা বাহুল্য বর্জিত। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে। যতটুকু না করলেই নয় ততটুকুই। এবছর পুজো উপলক্ষ্যে যা অর্থ সংগৃহিত হয়েছে তার বেশীর ভাগটাই উদ্যানের শ্রীবৃদ্ধির কাজে ব্যবহৃত হবে। আম্ফানে আমাদের প্রভুত ক্ষতি হয়েছে। পাঁচিলের একটা বড় অংশ ভেঙ্গে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বা খেলাধূলার জন্য যেসব শেড রয়েছে সেগুলো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। উদ্যানের পূজা কমিটিকে ধন্যবাদ। তাঁরা তাদের পুজোর খরচের অনেকটা বাঁচিয়ে উদ্যানের উন্নয়নে দান করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য দূর্গা পুজো বা সরস্বতী পুজো উদ্যান কমিটির অর্থে হয় না। এই দুটো পুজোর জন্য আলাদা কমিটি তৈরী হয় এবং তাঁরা আলাদাভাবে চাঁদা তুলে এই পুজোর আয়োজন করে থাকেন।
এই শারোদৎসবের অন্যতম আকর্ষণ নবমীর আড্ডা। ঐদিন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের আমন্ত্রণে বিধান শিশু উদ্যানে আসেন। সারাদিন গল্প আলোচনা আর খাওয়াদাওয়া হয়।খুব হৈহুল্লোড় আর আনন্দের সঙ্গে দিনটা কাটে। কিন্তু এইবছর এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হবে না বিভিন্ন রকমের সরকারি নিয়মের জন্য। যেসব নিয়ম করা হয়েছে তা অত্যন্ত যুক্তিসজ্ঞত এবং আমাদের সকলের তা অবশ্যই মেনে চলা উচিত। নবমীর এই সুন্দর অনুষ্ঠান না করতে পারার জন্য আমাদের সকলের মন খুবই খারাপ। আমাদের নিজেদের কথাবার্তায় বিগত বছরগুলোর সুন্দর স্মৃতির কথা বারবার ঘুরেফিরে আসছে। কিন্তু কোনো উপায় নেই। সামগ্রিক নিরাপত্তার খাতিরে আমাদের আগামীকালের নবমীর অনুষ্ঠান এই বছরের জন্য বাতিল করতেই হলো। আশা করছি দুর্গা মায়ের আশীর্বাদে একদিন সব স্বাভাবিক হবে। আমরা আবার আমাদের জীবনের ছন্দে ফিরে আসতে পারবো। বিধান শিশু উদ্যান আবার শিশু কিশোরদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে ভালো থাকার চেষ্টা করি।