নিজস্ব প্রতিনিধি:একজন পাহাড়ে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়, আরেকজন স্ট্রিট মিউজিক করেন শহরের রাস্তা থেকে সুন্দরবনের গ্রামে।একজন চন্দন বিশ্বাস, আরেকজন নীলাঞ্জন সাহা।ভাবছেন এঁদের মিল কোথায়!মিল বাইসাইকেল-এ।হ্যাঁ, এঁদের দুজনেরই বাহন বাইসাইকেল।চন্দন বেড়িয়ে পড়েন নানা পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায়,ঘুরে ফেরেন এমন রাস্তায় যা খুব কম লোকই পাড়ি দিয়েছেন, শুধু ঘুরেই বেড়াননি,বানিয়েছেন ডকুমেন্টারি ছবি “চরৈবেতি” দেখান হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।আর এই ঘুরে বেড়ানোটা সবটাই কলকাতা থেকে সঙ্গী বাইসাইকেল। আরেকজন নীলাঞ্জন সাহা কলকাতার রাজপথে স্ট্রিট মিউজিক নিয়ে কাজ করবেন বলে ভেবে ফেলেন এক অভিনব ভাবনা।”মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ”, হ্যাঁ এটাই তাঁর ব্র্যান্ড।এখন অনেকেই তাঁকে সেই নামেই চেনেন।পারফর্ম করেছেন কলকাতা স্ট্রিট মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, মাউন্টেন মিউজিক ফেস্টিভ্যাল এর মতো অনুষ্ঠানে। নিজে উদ্যোগী হয়ে করেছেন “কলকাতা ইনস্ট্রুমেন্টাল জ্যামিং ফেস্টিভ্যাল”। গোলপার্কের মোড়ে বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে স্যান্ডউইচ বিক্রির সাথে গানের উপহার আজ অনেকেই জানেন।অনেকেই আসেন এই স্ট্রিট মিউজিক উপভোগ করতে।এসেছেন তিমির বিশ্বাস, সমীধ-ঊর্ভির মতো পরিচিত শিল্পীরা গলা মিলিয়েছেন গানে।বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে কলকাতা থেকে পাড়ি দেন সুন্দরবনে এক স্থানীয় স্কুলে কচিকাঁচাদের গান শেখাতে।এমনই দুই বাইসাইকেলিস্টদের সম্মান জানালেন খুকুমণি-সিন্দুর ও আলতা এর পক্ষ থেকে কলকাতার আইসিসিআর এর স্পাইসেস এন্ড সসেস ক্যাফেতে।উপস্থিত ছিলেন সংস্থার ডাইরেক্টর অরিত্র রায়চৌধুরী।চন্দন বিশ্বাস বললেন,” ১৭ ফেব্রুয়ারি,২০১৮ সাইকেল নিয়ে ‘ট্রান্স হিমালয়ান’ সফর শুরু করি, কলকাতা, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা হয়ে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল ঘুরে সেখান থেকে ভুটান পৌঁছই। তারপর সিকিম ঘুরে শিলিগুড়িতে আসি।তারপর গন্তব্য ছিল নেপাল। ২-৩ মে সাইকেল নিয়ে রওনা দিই নেপালে।ঘুরে বেড়ানো তার সাথে সেই জায়গার ছবি-ভিডিও তোলা আর সেখানকার নানা তথ্য সংগ্রহের অমোঘ নেশা আমার এই সব জার্নির পিছনের মূল লক্ষ্য।সম্প্রতি একটা তথ্যচিত্র বানিয়েছি ‘চরৈবেতি’ যেটা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে।” নীলাঞ্জন সাহা বলেন,” গানকে সঙ্গী করে আগামী দিনে পথ চলার ইচ্ছা রয়েছে।মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ করার উদ্দেশ্য ছিল স্ট্রিট মিউজিককে একটা জায়গা করে দেওয়া।স্ট্রিট মিউজিক নিয়ে চর্চা হওয়া।সব কিছুর জন্য একটা অর্থ লাগে তাই স্যান্ডউইচ বিক্রির কনসেপ্টটা মাথায় আসে।কিছুটা হাতখরচ তো আসে।আর সাথে রইল গান।সঙ্গী বাইসাইকেল।” এই বাইসাইকেল কেন বলতে দুজনেরই মত দূষণহীন এই যান প্রকৃতির পক্ষে ভালো, সাইকেলিং করলে শরীর ভালো থাকে, ভীড় এড়িয়ে নিজের মতো করে চলা যায়।খুকুমণি এর পক্ষে সংস্থার ডাইরেক্টর অরিত্র রায়চৌধুরী বলেন, “যাঁরা এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসেন।এই অকুতোভয় যুবকেরা যাঁরা এই প্রজন্মের প্রতিনিধি এই রকম কাজ করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন তাঁদের আমরা আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে কুর্নিশ জানাই।এই প্রকার উদ্যোগ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।জীবনে একটু অন্যরকম ভাবেও যে ভাবা যায় আর সেই মাধ্যমের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা দিয়ে যে নিজের পরিচয় গড়ে তোলা যায় এই দুই যুবক তার নজির সৃষ্টি করেছেন।বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে ওঁদের এই যাত্রাপথ আরো সুগম হোক এই কামনা করি।”