By Ramiz Ali Ahmed
ওয়েব সিরিজ:উৎসব-এর পরে পরিচালক:অভিনন্দন দত্ত
অভিনয়ে:কৌশিক সেন,সত্যম ভট্টাচার্য,বিমল চক্রবর্তী,ঐশ্বর্য সেন, সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়,শ্রেয়া ভট্টাচার্য
রেটিং:৪/৫
সম্প্রতি আড্ডাটাইমস মুক্তি পেয়েছে পরিচালক অভিনন্দন দত্তর আট এপিসোডের ওয়েব সিরিজ ‘উৎসব-এর পরে’।কে বলে বাংলায় ভালো ওয়েব সিরিজ হয় না!পরিচালক অভিনন্দন দত্ত এই সিরিজটাতে ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছেন।কাহিনি,চিত্রনাট্য সবই অভিনন্দন দত্তর।
২০১১ সালের প্রেক্ষাপটে তৈরি অভিনন্দন দত্তর এই সিরিজ। উত্তর কলকাতার বনেদি মল্লিক বাড়ি তার কাহিনির প্রেক্ষাপট। দুর্গাপুজো, পারিবারিক সম্পর্কের পাশাপাশি রাজনৈতিক মতাদর্শের ছোঁয়াও রয়েছে। সমসাময়িক রাজনীতির পাশাপাশি যেমন চারের দশকের কাহিনি উঠে এসেছে, তেমনই দেখানো হয়েছে সাতের দশকের নকশাল যুগও।এই নকশাল যুগের প্রেক্ষাপটে সক্রিয় কৌশিক সেন চরিত্রটি, যে পরবর্তীকালে সব কিছু ছেড়ে বিদেশে চলে যায়। এরপর দুর্গাপুজো উপলক্ষে কলকাতায় ফেরে পরিবার নিয়ে।কৌশিক সেনের চরিত্রের নাম উৎপল।উৎপল পাপিয়ার একমাত্র মেয়ে সোহিনী যার বিদেশেই পড়াশুনা।পরিচালক তার ক্যামেরার চোখ দিয়ে সুন্দর ভাবে মল্লিক বাড়ির সমস্ত সদস্যদের দারুনভাবে পরিচয় করিয়েছেন।
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রের নাম ঋক।সোহিনীর বড় জেঠুর ছেলে ঋক।ফিল্ম নিয়ে পড়া ঋক পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শও প্রবল। বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ঋক।যৌথ পরিবারে রয়েছে আরো অন্যান্য চরিত্র।রয়েছে বাড়ির দুই প্রবীণ চরিত্র মানি ও দিদুন।কাহিনি এর থেকে আর বেশি বলা যাবে না।অভিনন্দন দত্তর বুনোট চিত্রনাট্যে প্রতিটি এপিসোড হয়ে উঠেছে টানটান। পরিচালনার মুন্সিয়ানায় প্রতিটি চরিত্র হয়ে উঠেছে জীবন্ত।ঋকের চরিত্রে শান্তিলাল পুত্র ঋতবত জমিয়ে অভিনয় করেছেন।তার বিপরীতে টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ ঐশ্বর্য নজর কেড়েছে।সুন্দর দেখার পাশাপাশি অভিনয়টাও অতি সুন্দর।বিশেষ করে ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে গোটা সিরিজ জুড়ে তার কথাবার্তা প্রশংসার দাবি রাখে।উৎপলের চরিত্রে কৌশিক সেন অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নেই।তিনি যে একজন শক্তিশালী অভিনেতা তা আবার স্বাক্ষর রাখলেন তিনি।বিশেষ করে নজর কাড়ে কৌশিক সেন ও ঋতব্রতর কথপোকথন-ঋতব্রত যখন কৌশিক সেন-কে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কোনটা বড় সাফল্য নাকি মূল্যবোধ!ঋতব্রত ও ঐশ্বর্যের কেমিস্ট্রিও দারুন লাগে।সিরিজের অন্যান্য চরিত্রে প্রত্যেকে চরিত্র অনুযায়ী যথাযথ।
সিরিজের ক্যামেরার দায়িত্ব সামলেছেন মৃণ্ময় নন্দী। নেপথ্য সংগীত পরিচালনা করেছেন ময়ূখ এবং মৈনাক জুটি।দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত,একটা লোকগীতি এবং একটা আধুনিক গান আছে।প্রতিটি গানই সামঞ্জস্যপূর্নভাবে ব্যবহার হয়েছে।শাহ আব্দুল করিমের বহুল প্রচারিত গান অবন্তী দত্তর কণ্ঠে “আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি মন বান্ধিবি কেমনে?
আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি পরাণ বান্ধিবি কেমনে?” মন ছুঁয়ে যায়।সব মিলিয়ে ‘উৎসব-এর পরে’ উৎসবের মরসুমে দারুন একটি উপহার।