✍️প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার
এক মাতালের আজ জন্মদিন। এক broken intellectual-এর আজ জন্মদিন। এক ভাঙা ভাঙা বুদ্ধিজীবীর আজ জন্মদিন। আমার প্রিয়তম চিত্রপরিচালকের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি, ঋত্বিক কুমার ঘটক।
আইজেনস্টাইন ও পরাবাস্তবতাবাদী আন্দ্রে ব্রেটনের ভাবশিষ্য ঋত্বিকের প্রবঞ্চনাময় মায়া-সৃজনে বারবার আবির্ভাব ঘটেছে অতীন্দ্রিয়ের। আর তাঁর সৃষ্টির পরতে পরতে মিশে আছে স্রষ্টার স্ববিরোধী সত্তার জমাট বাঁধা রক্ত। নইলে যে ঋত্বিক বারবার শিল্পীর সামাজিক দায়িত্বের কথা বলেন, অরাজনৈতিক কোনও কিছুর অস্তিত্বে বিশ্বাসই করেন না, সেই বিপ্লববাদী স্রষ্টাই কিনা ‘সুবর্ণরেখা’ ছবিতে মেনে নেন, এই জগৎকে বদলাবার শক্তি মানুষের নেই — “ঈশ্বর, তুমি না পলাইছিলা?”
নেতিবাচক অনুভূতির এমন ইতিবাচক রূপকারের দেখা সচরাচর মেলে না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত সমাজের ক্ষয়িষ্ণু চরিত্র প্রকট হয় ‘নাগরিক’ ছবিতে। ‘অযান্ত্রিক’ ছবিতে দেখা যায়, মানুষ আর যন্ত্র উভয়েরই গন্তব্য ভাঙা লোহার বাজার। একটা অব্যক্ত ঘৃণার মেঘে ঢাকা আছে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিটি। ‘কোমল গান্ধার’ ছবিতেও চরিত্রগুলো গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছে অনিবার্য অধোগমনের উদ্দেশে। বাংলা গণনাট্য আন্দোলনের দ্বিধাগ্রস্ত নেতৃত্বের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন বিদ্রূপও রয়ে যায় সেখানে।
আসলে মানব-জীবনে বিপ্লবের চরিত্রটাই বোধহয় এমন। দ্বিধাহীন, অসংশয়ী বিপ্লব ও বিপ্লবী কবে, কে, কোথায় দেখেছে? ঋত্বিক সেই বাস্তবসম্মত সংশয়েরই রূপকার।