শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর কলকাতায় নতুন কিছু নয়। তাবড় তাবড় শিল্পীরা কলকাতার দর্শকদের সমীহ করেই চলেন। পন্ডিতজী, ওস্তাদজীদের গান-বাজনা তো লেগেই আছে, কিন্তু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দেশের তরুণ তুর্কিরা কেমন তৈরি হচ্ছে, তা জানার খুব একটা সুযোগ তৈরি হয় না। অথচ এই তরুণ প্রতিভারাই দেশের ভবিষ্যৎ। এবার এই সুযোগ করে দিচ্ছে ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং সংষ্কৃতি সাগর। ওদের যৌথ উদ্যোগে একঝাঁক তরুণ প্রতিভাদের নিয়ে জি ডি বিড়লা সভাগরে ২৫ মে বসতে চলেছে অভিনব শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর ‘উড়ান’। নিঃসন্দেহে কলকাতার জন্য এটা একটা বড় সুখবর। তরুণ প্রতিভাদের কাছেও খুব বড় একটা সুযোগ। কলকাতার মত সমঝদারি শহরে নিজেদের মেলে ধরার সুবর্ন সুযোগ।
‘উড়ান’-এ অংশগ্রহণ করবেন দেশের অন্যতম বাছাইকরা কয়েকজন তরুণ প্রতিভা। এঁরা ইতিমধ্যেই দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলতে শুরু করেছেন। এই আসরে থাকছে উদীয়মান প্রতিভা সেতারবাদক মেহতাব আলি নিয়াজি এবং সাড়া-জাগানো তবলাবাদক দেবজিৎ পতিতুন্ডির যুগলবন্দি। দুজনেই ছাইচাপা আগুন। দুজনেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবারের উত্তরসূরি। মেহতাব মোরাদাবাদ ঘরানার সেতারবাদক। বাবা বিখ্যাত সেতারবাদক মহসিন আলি খানের কাছেই অনেক ছোটবেলা থেকেই মেহতাব তালিম নিয়েছেন। স্বয়ং বিরজু মহারাজ, জাকির হুসেনের মত দিকপালরা ওঁর বাজনার তারিফ করেছেন বার বার। দেবজিতের হাতেখড়ি ওঁর বাবা তবলাবাদক অমল পতিতুন্ডির কাছে। পরে বাবার গুরু শঙ্খ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন। এখন ওঁরা দুজনেই দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠান করে ক্রমশই নিজেদের জায়গা শক্ত করে নিচ্ছেন।
থাকছে এই সময়ের অন্যতম প্রতিভাময় তরুণ তবলাবাদক যশবন্ত বৈষ্ণবের একক তবলা বাদন। মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই নিজের বাবার ( বিখ্যাত তবলাবাদক রাজেন্দ্র বৈষ্ণব) কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। আজ নিঃসন্দেহে যশবন্ত তবলা দুনিয়ায় একটা উজ্জ্বল নাম। দিকপাল তবলাবাদকদের যোগ্য উত্তরসূরী। যশবন্তকে সঙ্গত করবেন দুই প্রতিভাধর তরুণ তুর্কি আকাশ জালমি (হারমোনিয়াম) এবং আমন হুসেন (সারেঙ্গি)। অনুষ্ঠান শেষ হবে নবীন প্রজন্মের অন্যতম একজোড়া বিস্ময়কর প্রতিভাধরদের যুগল ঝংকারে। এঁরা হলেন সরোদবাদক ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার এবং তবলাবাদক ইশান ঘোষ। দুজনেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে আজ পরিচিত নাম। দেশে-বিদেশে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেবার কাজে উজ্জ্বলতম কান্ডারি দুজনেই। ইন্দ্রায়ুধ বিখ্যাত সরোদবাদক পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়নের সুযোগ্য পুত্র এবং ঈশান বিখ্যাত সেতার এবং তবলাবাদক নয়ন ঘোষের যোগ্য উত্তরসূরি। কয়েকমাস আগেই এঁদের যুগলবন্দি কলকাতায় সাড়া ফেলেছিল। আবার কলকাতাকে মাতাতে দুজনকে একসঙ্গে মঞ্চে দেখা যাবে।
তরুনদের নিয়ে এমন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর খুব একটা হয় না। তরুণদের মেলে ধরার জন্য ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং সংষ্কৃতি সাগরের তাই এখানে বড় ভূমিকা। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় এক নতুন যৌবনের ডাকে সামিল হবে গোটা কলকাতা।