মরীচিকা নয়, মধ্য কলকাতায় মধ্য প্রাচ্যের ম্যাজিক মেহেফিল।রক স্টার হোটেলের ছাদ রেস্তোরাঁ ইয়াল্লা হাবিবি যেন মরু মহল্লার টুকরো মন্তাজ।আরব দুনিয়ার আয়েসি আহার বিলাস।
ধু ধু সোনালী শূন্যতা আর রুক্ষতার মধ্যেও বিপুল প্রাণ প্রাচুর্যের সিম্ফনি ছোটবেলা থেকেই আকর্ষণ করত ইমতিয়াজ আলি মোল্লাকে। কলকাতার পার্ক সার্কাসের ছেলে মরু প্রদেশের ওই ছন্দময়তাকে ছুঁতে চেয়েছেন আকৈশোর। ছুটে গিয়েছেন বালির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শুকনো বাতাসের বন্দিশ শুনতে। কখনও দুবাই, কখনও আফগানিস্তান, কখনও সৌদি আরব কিংবা লেবানন … খাদ্য রসিক ইমতিয়াজের মনে জন্ম নিতে থাকে ভিন্ন ভাবনা। মরু-মানুষদের প্রিয় পদগুলি ভোজন বিলাসি শহুরেদের ডিসে যদি সাজিয়ে দেওয়া যায়-কেমন হয়!
উদ্যোগী পুরুষ ইমতিয়াজ। উদ্যমেও ঘাটতি নেই। ২০১০-এ পা রেখেছিলেন হোটেল ব্যাবসায়। বাবা আল হজ জামশেদ আলি মোল্লার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ সঙ্গে নিয়ে। নেহাতই শখে। আদপে ওঁরা নির্মাণ ব্যাবসায়ী।
সেই ব্যস্ততার ফাঁকে ফোকরেই আরব-আহারের আয়োজন। অবশেষে স্বপ্নের সাধ পূরণ। শুরুতে ছোট করে বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের উল্টো দিকের ফুটপাতে হোটেল রক স্টারের একতলায়। একবছর আগে। অচিরেই সাফল্য। ফলে দরকার পড়ল আর একটু বড় জায়গার। সেক্ষেত্রে হোটেলটির ছাদই উপযুক্ত জায়গা। সামনেই উড়ালপুল। দৃষ্টিনন্দন গতিময়তার সঙ্গে উন্মুক্ত আকাশের ব্যাপকতা। ইমতিয়াজের নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি আর উদ্ভাবনী উৎসাহে ছাদই হয়ে উঠল মায়াবী মরু নিকেতন। সঙ্গী সহধর্মিণী মায়া মোল্লা।
ইয়াল্লা হাবিব অর্থাৎ বন্ধু তোমরা সব এসো। রেস্তোরাঁটির নামে আরব- আতরের সুবাস। স্বাদে সুগন্ধে আরবীয় কুইজিনের খুসবু।প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্কোয়ার ফিটের ইয়াল্লা হাবিবি তে একসঙ্গে আশিজন লোকের বসার ব্যবস্থা। স্ট্যান্ড লনে একশো জনের অনায়াস আনাগোনার সুযোগ। ছাদ সেজেছে গুফায়।ইমতিয়াজের দাবি, ‘ওখানে বসলে মনে হবে আরবের কোনও মরু শহরেই বসে আছি।‘ আছে নানা প্রজাতির ক্যাকটাস। খেজুর গাছের সরণি। মরুভূমি ও উঠের দেওয়াল চিত্র। রেস্তোরাঁর আবহে প্রায় দুহাজার আরবিয়ান ফোক-ফিউশনের মুর্ছনা। রক স্টারের সদরে সৌদি আরবিয়ান সাজে ম্যানিকুইন।
খাদ্য তালিকায় লেবানিজ থেকে চাইনিজ, মোগলাই এবং থাই, আছে ভারতীয় ও উপমহাদেশিও… বৈচিত্রে ভরপুর রসনায় জল আনা আহারের আয়োজন। অথচ আঁতকে ওঠার মতো দাম নয় মোটেই। ফুরফুরে মেজাজে মনোনিবেশ করা যাবে ইয়াল্লা হাবিবির স্পেশাল ‘আরবিক ফিউশন’-এ। তালিকায় আছে রান- এ – হাবিবি, আদম খাস নাল্লি, স্পাইস ল্যাম্ব বার্গার, গলৌটি কাবাব, ল্যাম্ব স্টু, ফালাফেল অ্যান্ড পিৎজা ব্রেড-এর মত মন কাড়া মাংসল পদ।
নিরামিষাশীদের জন্যও রয়েছে রাশভারী ডিস। যেমন তন্দুরি বাবরি আলু, আলু নাজাকাত, চাঁদনি পনির টিক্কা, ভেজ শিক কাবাব। তালিকাটা বেশ লম্বা আর লোভনীয়।
আরবী খানা আদপে মশলাদার। ঝালের আধিক্য মরুভূমির রোদের মতোই চড়া। রেস্তোরাঁর ব্যাবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা তাবিশ আলম জানালেন, ‘ভারতীয় তথা কলকাতার মানুষেরা আরবিয়ানদের মতো অতটা ঝাল খেতে পারেন না। আমরা তাই প্রতিটি আরবিয়ান পদকে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের উপযোগী করে প্রস্তুত করি। ফলে এখানে যাঁরা খেতে আসবেন তাঁদের খাদ্য গ্রহনের অভ্যস্থ সহনশীলতার সঙ্গে আরবিয়ান খানার ফ্লেভারও উপভোগ করতে পারবেন।‘
ইমতিয়াজের ইচ্ছে পূরনে সামিল হতে গত সোমবার রেস্তোরাঁয় পা রেখেছিলেন বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। ইয়াল্লা হাবিবির পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতায় মুগ্ধ বাবুনবাবু বলেন, ‘রেস্তোরাঁটি তে ঢুকেই মনে হল কোনও আরব রাষ্ট্রে এসে পৌঁছলাম।‘ খাদ্য রসিক বাবুনবাবু মজার ছলে বললেন, ‘মেনু চার্টে চোখ বুলিয়ে দেখলাম এখানকার খাবার মরু দেশের মতো মহার্ঘ্য নয়। সস্তা। শহরের মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক মাপকাঠির মধ্যেই। খেতে গিয়ে হাতে-জিভে ছ্যাঁকা লাগবে না।‘ সেই সূত্রেই তাবিশ আলম জানালেন, ‘আমাদের এখানে এক এক দিন এক এক রকমের কম্বো অফার থাকে।‘ ইমতিয়াজের সংযোজন, ‘দুশো থেকে চারশো টাকার মধ্যে দুজন মানুষ পেট ও মন ভরে খেতে পারবেন।‘ জানালেন, আপাতত রেস্তোরাঁ খোলা থাকছে বেলা এগারোটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত। খুব শিগগিরই ব্রেকফাস্টও চালু হবে রেস্তোরাঁয়।
এছাড়াও সেদিন ইমতিয়াজকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপিতা দিলীপ বোস, ৬১ ওয়ার্ডের পুরপিতা মনজর ইকবাল, ৬৪ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শাম্মি জাহান, ওয়ার্ড সভাপতি শারিক আহমেদ, রাজীব দেব, তপনকুমার মাইতি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায় আল হজ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি প্রমুখ।